সম্পাদকীয়

পাটজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নিন

স্বাধীনতার পরের দেড় যুগ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পাটের অবদানই ছিল মুখ্য। তবে সময়ের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন এলেও পাটশিল্পে বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। ফলে এ খাতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে অন্যান্য খাত। যদিও পাটকলের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু পাটপণ্যে তেমন বৈচিত্র্য আসেনি। আগের মতোই কাঁচাপাট, সুতা ও বস্তার ব্যবসাই করছে বেশির ভাগ পাটকল। হাতেগোনা কয়েকটি পাটকল বহুমুখী পণ্য ও উপকরণ তৈরি করছে। পাট বাংলাদেশের সোনালি আঁশ। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২ শতাংশ উপার্জিত হয় পাট ও পাটপণ্য থেকে। তৈরি পোশাক শিল্পের পর এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। পাট থেকে আহরিত মোট বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে কাঁচা পাট রপ্তানি থেকে। একসময় পাট ও পাটজাত পণ্যই ছিল বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত। কালক্রমে তা ফিকে হয়ে এসেছে। এর প্রধান কারণ গার্মেন্টস ও নিটওয়্যার শিল্পের দ্রুত প্রসার ও পাটশিল্পের স্থবিরতা। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ সালে মোট বৈদেশিক আয়ে পাটের হিস্যা ছিল প্রায় ৯০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ১.৮৮ শতাংশে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত দেশে ৭৭টি পাটকল স্থাপিত হয়। স্বাধীনতার পরে এসব জাতীয়করণ করা হয়। আশির দশকে প্লাস্টিক আসার পর পাটপণ্যের চাহিদা কমে যায়। তখন থেকেই সরকারি পাটকলগুলো সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে একের পর এক বন্ধ করা হতে থাকে সরকারি পাটকলগুলো। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল এখন অতীত। ২০০০ সালের পর থেকে বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক তন্তুর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হলে দেশে বেসরকারি খাতে পাটকল স্থাপন বাড়তে থাকে। কিন্তু বেসরকারি খাতও প্রধানত কাঁচা পাট, বস্তা ও সুতার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। দেশের পাটকলগুলোতে সবচেয়ে বেশি পাটের সুতা উৎপাদন হয়। এরপরই রয়েছে বস্তা। বর্তমানে দেশে তিনশর বেশি পাটকল রয়েছে। কিন্তু সব পাটকল চালু নেই। ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০টি পাটকল নিয়মিত উৎপাদনে রয়েছে। বাকিরা অনিয়মিতভাবে উৎপাদন করে। একসময় বাংলাদেশের পাটের প্রধান ক্রেতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন ধনী দেশ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় আজ প্লাস্টিকের ব্যাপকতা দেখতে পাওয়া যায়। এর কারণ হচ্ছে, পাটের চাষ কমে যাওয়া এবং সরকারের সুদৃষ্টির অভাব। পাটের যৌক্তিক দাম পেলে এক কোটি চাষি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখবে। এই পাট দিয়ে ব্যাগ, পার্টস, জুতা, শতরঞ্জি, শিখা, পাপোশ, টুপি, মানিব্যাগ, কম্বল ইত্যাদি তৈরি হয়। উল্লিখিত এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। এখন সরকার পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার কারণে এই খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশে আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া দেশের শিল্পে এক-তৃতীয়াংশ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পাটের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ চাহিদা পূরণ করতে পারে বাংলাদেশ, কারণ প্রাচীনকাল থেকেই এ দেশ আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের একচেটিয়া রপ্তানিকারক ছিল। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এ লক্ষ্যে কৃষকদের উৎসাহ জোগাতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button