বেকারত্বের কারনেই কি বাড়ছে চুরি-ছিনতাই?

ছাত্র-জনতার তোপের মুখে হাসিনা পালালেও কাটেনি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট। যার ফলে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কর্মহীন হয়ে পড়েছে লাখো শ্রমিক। কাজ হারিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন তারা। এরমধ্যে অনেকেই হঠাৎ করেই বেকার হওয়ায় চুরি, ছিনতাই, প্রতারণা এমনকি মাদক ব্যবসার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে দেশে বর্তমানে নতুন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে বেকারত্ব। গত এক বছরে শুধু গাজীপুরেই ৭২টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে একসঙ্গে বেকার হয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। এর মধ্যে গত ছয় মাসেই বন্ধ হয়েছে ২৯টি কারখানা। বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বড় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর ১৩টি কারখানা ছাড়াও মাহমুদ জিন্স, ডার্ড কম্পোজিট, পলিকন লিমিটেড, টেক্সটাইল ফ্যাশন, ক্লাসিক ফ্যাশন, লা-মুনি অ্যাপারেলসসহ বিজিএমইএভুক্ত শীর্ষ ২০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকে অন্য পেশায় যুক্ত হলেও একটি বড় অংশ কোনো কাজ না পেয়ে হতাশা থেকে অপরাধ জগতে প্রবেশ করছেন। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে গাজীপুর জেলা ও মহানগরে ১০৩টি হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে গাজীপুর মহানগরে ৪১টি এবং জেলার পাঁচটি থানায় ৬০টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই পরিসংখ্যানটি জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। আবার এদিকে রাজধানীর উত্তরায় সন্ধ্যার পর বাইরে বের হওয়া ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। রাস্তায় গলিতে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হচ্ছে। কাকে যে কোন মুহূর্তে আক্রমণ করবে, বোঝার উপায় নেই। জানা গেছে, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সন্ধ্যার পর সক্রিয় থাকে ছিনতাইকারীরা। আবার সুযোগ পেলে দিন-দুপুরেই করছে এসব অপরাধ। এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সমস্যা সাময়িক নয়। তাদের মতে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্থানের সমাধান না হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। দেশে যখন হঠাৎ করে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যায়, তখন তা সমাজে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। উত্তরা এখন তার প্রকট উদাহরণ। সমাধান করতে হলে দ্রুত কর্মসংস্থান এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হবে। এসব অপরাধ কমাতে হলে বেকারদের আয়ের সুযোগ তৈরি করতে হবে। তা না হলে অপরাধ দিন দিন আরো বাড়বে। সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হলে এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। একটি সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই অপরাধপ্রবণ এলাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তাতে জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তার সম্ভাবনা আবার তৈরি হবে।
