সম্পাদকীয়

দেশে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে অস্ত্রোপচারে শিশুর জন্ম

স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করা একজন নারীর অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় ভিন্নচিত্র। স্বাভাবিক সন্তান প্রসব দেওয়ার বিপরীতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে সি-সেকশন নামে পরিচিত সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান। বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিবার সম্ভবত তাদের আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ খরচ করছে বাচ্চা প্রসবের ক্ষেত্রে। কাউকে কাউকে ঋণ করে কিংবা সঞ্চয় ভেঙেও এই খরচ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জন্ম নেওয়া প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ৫১ জনের জন্ম হয় অস্ত্রোপচারে। গ্রামাঞ্চলেও এ হার কম নয়। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চবিত্তদের মধ্যে সিজারে সন্তান প্রসব করার প্রবণতা বেশি। অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য একশ্রেণির চিকিৎসক বা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অপ্রয়োজনে প্রসূতি মায়েদের অস্ত্রোপাচারে সন্তান প্রসব করাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আসলে একজন গর্ভবতী মা ও স্বজনদের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করতে হয়। মফস্বল এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপাচার করার আগে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষাও করা হয় না এবং শুধু টাকার লোভে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপাচারের দিকে ঠেলে দেয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপাচারের খপ্পরে পড়ে অনেক গর্ভবতী মা অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন। আর বেঁচে থাকা অনেক মা ও তার শিশু সন্তান পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, যা সারা জীবন তাদের ভোগ করতে হয়। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের ফলে নারীর দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। অস্ত্রোপচার-পরবর্তী জটিলতা, হার্নিয়াসহ বিভিন্ন সংক্রমণের হারও বাড়ছে। প্রসূতির এই সংকটের প্রভাব শিশুর উপরেও পড়তে বাধ্য। এটা কম উদ্বেগজনক নয়, উত্তম সেবাপ্রাপ্তিতে অর্থ ব্যয় করে বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে অস্ত্রোপচারের মত ঝুঁকিতে পড়ছে। যেখানে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানবসেবা, সেখানে মুনাফাই মুখ্য হয়ে উঠলে যেমন রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমন দেশের স্বাস্থ্যসেবাও আস্থা হারায়। বেসরকারি হাসপাতালের এই চিত্রে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগও দায়িত্ব উপেক্ষা করতে পারে না। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও অনুধাবন করতে হবে, কার্যত লোক ঠকানোর এমন ব্যবস্থা দীর্ঘদিন অব্যাহত রাখা যাবে না। মানুষ সচেতন হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পকেট কাটর আয়োজন পরিত্যাজ্য হতে সময় লাগবে না। বরং যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে সুনাম ও আস্থা অর্জন করতে পারলে তা টেকসই ও দীর্ঘ মেয়াদে অধিকতর মুনাফা প্রদান করবে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রসবে রোগীকে উৎসাহিত করতে চিকিৎসকদের আন্তরিকতারও বিকল্প নেই। অস্ত্রোপাচার বাড়ার পেছনে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ছাড়াও এটা এখন অনেকের কাছে একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। তারা মনে করছেন, স্বাভাবিক প্রসবের চেয়ে অস্ত্রোপচারে মায়ের শরীর এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য ভালো। এটি মারাত্মক ভুল ধারণা এবং এটা দূর করতে হবে। অস্ত্রোপচার কমাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button