ওধুধের দাম নাগালের বাইরে: দাম কমানো প্রয়োজন

দেশের ওষুধের বাজারে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। এখানে ঔষধ প্রশাসনের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। ফলে বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ওষুধের দাম। দেশে গত কয়েক বছরে বেশির ভাগ অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম শতভাগ পর্যন্ত বেড়েছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। কারণ এসব ওষুধ রোগীদের নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কো¤পানিগুলো ওইসব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো ওষুধের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ থেকে শুরু করে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত। যদিও সরকারের পটপরিবর্তনের পর ওষুধের দাম খুব একটা বাড়েনি। তবে দাম না বাড়লেও এখনও অনেক ওষুধের দাম সাধারণ রোগীদের নাগালের বাইরে রয়েছে। ফলে নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকে ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। আর ওষুধের অব্যাহত দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের একটি অংশ ওষুধ কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে বলেও জানা গেছে। জানা গেছে, বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী ও তাদের স্বজন এবং ওষুধ বিক্রেতাদের অভিযোগ, ওষুধের বাজারে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। এখানে ওষুধ প্রশাসনের কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। মুক্তবাজারের যুক্তিতে অপরিহার্য এ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে কো¤পানিগুলো। মূলত ওষুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের তেমন কোনো ভূমিকা না থাকায়ই এবং যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা না নেওয়ায় ব্যাপক হারে বাড়ছে ওষুধের দাম। ফলে এ খাতে জনসাধারণের ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অন্তবর্তী সরকারের নজর দেওয়া উচিত। আর জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মানুষের সামর্থ্য বিচার করে রোগ-বালাই হয় না। আর ওষুধের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে দেশের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই জনগণের চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের তদারকি বাড়ানোর বিকল্প নেই। যদিও ওষুধের দাম বাড়ার পেছনে ব্যাংক ঋণের সুদ বেশি, ডলার সংকট, ওষুধের কাঁচামালের বাড়তি দাম এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিও উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন ওষুধ কো¤পানিগুলোর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য সাধারণ রোগীদের নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যদিও দাম বাড়ানো-কমানোর বিষয়টি শুধু অধিদফতরের একার কাজ নয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা জড়িত। তবে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ওষুধের দাম নির্ধারণ হওয়া উচিত। একই সঙ্গে নৈরাজ্য থামাতে নজরদারিও বাড়াতে হবে।
