সম্পাদকীয়

সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

কৃষকের কাঁধে নতুন বোঝা

সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম হঠাৎ করে ৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সিদ্ধান্ত শুধু শিল্প খাত নয়, দেশের কৃষি অর্থনীতিকে সরাসরি আঘাত করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় আশ্বাস দিলেও যে কৃষক পর্যায়ে সারের দাম বাড়ানো হবে না, বাস্তবতা হলো আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপের কারণে ভর্তুকি কমানো প্রায় অনিবার্য। ফলে সারের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে, আর তার প্রভাব পড়বে কৃষক ও সাধারণ ভোক্তার জীবনে। কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কৃষি উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় এক-পঞ্চমাংশই সারের পেছনে যায়। দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, কৃষক নিরুৎসাহ হতে পারেন, সারের ব্যবহার কমে যাবে। এর ফলে চাল, ডাল, শাক-সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ পড়বে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। দেশে প্রায় ৮০ শতাংশ সার আমদানি করা হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ২০ শতাংশ সারের খরচও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়ে যাবে। পেট্রোবাংলা বলছে, বাড়তি এলএনজি আমদানি করে সার কারখানা সচল রাখাই উদ্দেশ্য। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত দ্বিমুখী তলোয়ারের মতো একদিকে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ, অন্যদিকে কৃষকের ওপর বাড়তি খরচ চাপানোর ঝুঁকি। প্রশ্ন হলো, জ্বালানি পরিকল্পনার দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতার দায় কি কৃষক বহন করবে? খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা ধরে রাখতে হলে কৃষককে চাপমুক্ত রাখা জরুরি। এজন্য ভর্তুকি কাঠামো পুনর্বিন্যাস করতে হবে, যাতে সারের দাম স্থিতিশীল থাকে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, যাতে মধ্যস্বত্বভোগীর আধিপত্য কমে এবং কৃষক উৎপাদনে উৎসাহিত হয়। কৃষি খাতকে টিকিয়ে রাখা মানে শুধু খাদ্য উৎপাদন নয়, এটি গ্রামীণ অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। সারের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কৃষকরা উৎপাদন থেকে সরে যেতে পারেন, যা গ্রামীণ দারিদ্র্য বাড়াবে এবং শহরমুখী চাপ তীব্র করবে। তাই সরকারের উচিত দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি পরিকল্পনা ও কৃষি নীতি সমন্বিতভাবে পুনর্গঠন করা, যাতে কৃষকরা নিরাপদে উৎপাদন চালিয়ে যেতে পারেন এবং দেশ খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল থাকতে পারে। কৃষিকে রক্ষা করা মানে জাতীয় অর্থনীতিকে রক্ষা করা—এই উপলব্ধি থেকেই এখনই সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button