অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

কোনো গুরুতর অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্স সেবাটা অনেক সময় বড় একটা আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহরগুলোর বড় বড় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের গেইটগুলো অদৃশ্য দুর্গের মতো একদল অসাধু চক্রের দখলে। এই চক্রগুলো অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করে এবং রোগী ও তাদের অসহায় পরিবারগুলোকে গলাকাটা ভাড়া, বিলম্বিত এবং নি¤œমানের সেবার মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে শোষণ করে আসছে। নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়হীনতা এবং সুস্পষ্ট নীতিমালার অভাবে গড়ে ওঠা এই ‘অ্যাম্বুলেন্স মাফিয়া’ চক্র একটি জীবনরক্ষাকারী সেবাকে এক শোষণমূলক ব্যবসায় পরিণত করেছে। প্রচলিত নিয়মে এ দেশে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য আলাদা কোনো লেন নেই। যান অনুযায়ী পৃথক লেনের ব্যবস্থা থাকলেও তা কোনো চালক মানেন না। ট্রাফিক পুলিশও হিমশিম খায় এত এত যানবাহন সামাল দিতে। তাই যানজটে আটকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা খবরে পরিণত হওয়াকে বন্ধ করা যায় না। কিন্তু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা শুরু করার আগেই যদি কেউ তা আটকে দেয় এবং রোগী মারা যায়, সেটা নিছক দুর্ঘটনা হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে যানজটে আটকে থাকা তো দূরের প্রশ্ন। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটে জড়িত দুইটি সমিতি, যেইগুলির নাম ‘বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি’ ও ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি’। প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের আশেপাশে থাকে তাদের শক্ত নেটওয়ার্ক। অধিকাংশ অ্যাম্বুলেন্সের মালিক হাসপাতালের কর্মী, প্রভাবশালী রাজনীতিক কিংবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে, স্থানীয় প্রশাসন এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সেবার মান নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে চলমান সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চাই, তবে হাসপাতালগুলোর প্রবেশ মুখে ঘাঁটি গেড়ে বসা এই শোষণমূলক বাজার শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো বিকল্প নেই।
