সম্পাদকীয়

নির্বাচনের আগে ঋণ খেলাপিদের বিষয়ে যা করণীয়

দেশের ব্যাংকিংখাত পাহাড়সম খেলাপি ঋণ নিয়ে পর্যুদস্ত। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে খেলাপি ঋণের হার ১৯৯৯ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের রয়েছে। ১৯৯৯ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল রেকর্ড ৪১ দশমিক ১০ শতাংশ। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন এবং ঋণ শ্রেণিকরণে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণের ফলে খেলাপি ঋণের এই অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি। তবে একটি সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে খেলাপি ঋণ আদায়ের। অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণাও আগামী দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে ঋণখেলাপি কোনো ব্যক্তি নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন। ব্যক্তি, মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, পরিচালকের দায়িত্বে থাকা ফার্ম বা কোম্পানির ঋণ এবং জামানত প্রদান করা ঋণ খেলাপি হলে প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। এজন্য নির্বাচন পূর্বকালীন সময়কে ‘ঋণ আদায় মৌসুম’ হিসেবে বিবেচনা করেন ব্যাংকার এবং নীতিনির্ধারকেরা। ঋণ আদায় মৌসুমকে কতটা কাজে লাগাতে প্রস্তুত এবং অতীতে কতটা কাজে লেগেছিল দেশের ব্যাংকগুলোর? সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান এবং সার্বিক পরিস্থিতি এই প্রশ্নের খুব আশাব্যঞ্জক উত্তর দেয় না। ইতিপূর্বে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়েও অনেক ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে এই আইন বিদ্যমান ছিল। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হয়েছে? যদি সম্ভবই হয়ে থাকে তাহলে সাবেক মন্ত্রী, এমপিদের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা পুঞ্জিভূত খেলাপি ঋণ থাকার সুযোগ ছিল না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি ঘটনা উদাহরণ হিসেবে এখানে আলোকপাত করা যায়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ একাদশ জাতীয় সংসদের এমপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের ২৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ থাকায় এক আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের বাতিল আদেশ বাতিল করে ওই খেলাপি ঋণ ৯ম বারের মতো পুনঃতফসিল করার আদেশ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারের একজন গ্রাহকের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ৩ বার পুনঃতফসিল করা যায়। ব্যাংকের টাকা ফেরত প্রদান না করেই আদালতের আদেশে ওই প্রার্থী ঋণখেলাপির তকমামুক্ত হন এবং নির্বাচনে জয়লাভে করে এমপি হিসেবে সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ঋণের টাকা ফেরত প্রদান না করেই আদালতের আদেশে খেলাপির তকমামুক্ত হয়েছেন এমন নজির অহরহ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button