সম্পাদকীয়

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ কেন?

খাদ্যনিরাপত্তা মানে একজন ব্যক্তি বা পরিবারের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যে পরিমাণ পুষ্টি দরকার এবং সে যদি স্বাভাবিক জীবন ধারণ করতে পারে, তাহলে বলা হয় খাদ্যনিরাপত্তা আছে। খাদ্যনিরাপত্তা বলতে বাজারে খাবার থাকলেই হবে না, খাবারটা সেই পরিবার বা ব্যক্তির কেনার সামর্থ্য থাকতে হবে। শুধু কেনার ক্ষমতা থাকলেই হবে না। খাওয়ার পর শরীরে পুষ্টি আসতে হবে। কাজেই খাদ্যনিরাপত্তা বলতে আমরা যেটা বুঝব, খাবারের প্রাপ্যতা থাকতে হবে। সেই খাবার কেনার আর্থিক ক্ষমতা থাকতে হবে। সবমিলিয়েই খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং ১৬ লাখ শিশু মারাত্মক অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথ বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালে একই বিশ্লেষণে দেখা যায়, যে দেশে ২ কোটি ৩৫ লাখ মানুষ উচ্চ মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। সরকার এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে ২০২৫ সালে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন নিশ্চিত করতে আরও জোরদার পদক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে। খাদ্যসংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এই ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের পাঁচটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের খাদ্যসংকটের কারণ হিসেবে ২০২৪ সালের দুর্যোগ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক অসুবিধার সম্মিলিত প্রভাবকে দায়ী করা হয়েছে। জানা গেছে, শুধু খাদ্যনিরাপত্তার সংকটই নয়, স্বাস্থ্যকর বা সুষম খাদ্য গ্রহণের দিক থেকেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশের ৪৪ শতাংশের বেশি বা ৭ কোটি ৭১ লাখ মানুষ এখনো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পান না। ২০১৭ সালের এ অনুপাত ছিল ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ ৭ বছরের উন্নতমানের খাদ্য না পাওয়া মানুষের সংখ্যা কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সুষম খাদ্য না পাওয়ার দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যা মানসম্মত খাবার পান না। এটা উদ্বেগের বিষয়। খাদ্য আমাদের মৌলিক অধিকার। সবার জন্য মানসম্মত খাবার না পেলে টেকসই উন্নয়ন হবে না। খাদ্যনিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এর ওপর দেশের মানুষের জীবন অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই এ সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জানা গেছে, কক্সবাজারের যে অংশে রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে ও যে অংশে শিবির নেই—দুই এলাকার স্থানীয় লোকজনও খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে। জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্যসংকটে পড়তে যাচ্ছে কক্সবাজারের মানুষ, বিশেষ করে উখিয়া ও টেকনাফের জনসাধারণ। এই জেলার ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন। কক্সবাজার ও ভাসানচর মিলিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ চলতি মাসে খাদ্যসংকট ও জরুরি অবস্থায় পড়তে যাচ্ছে। তাই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে এখনি শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button