ভোক্তার চাপ কমাতে পদক্ষেপ নিন

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা
বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা যেন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। শীতের মৌসুমে সাধারণত সবজির দাম কমে আসে, কিন্তু এবার সেই স্বস্তি দেখা যাচ্ছে না। বাজারে সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না, বরং পেঁয়াজের দাম দেড় শ টাকার ওপরে, শিম, ঢেঁড়স, পটোল, বরবটি- সবকিছুর দামই বাড়তি। নতুন আলুর আগমনও ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যয়ভার বেড়ে যাচ্ছে, আর মধ্যবিত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা আরও তীব্র হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী নভেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.২৯ শতাংশে, যা অক্টোবরের তুলনায় বেশি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি এক মাসের ব্যবধানে ৭.০৮ থেকে বেড়ে ৭.৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বাড়ছে, মানুষের আয় সেই হারে বাড়ছে না। মজুরি বৃদ্ধির হার মাত্র ৮.০৪ শতাংশ, যা মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। এর ফলে খেটে খাওয়া মানুষের পকেটের ওপর চাপ বাড়ছে এবং বাস্তবে তাদের ক্রয়ক্ষমতা সংকুচিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না এলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না। বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, পাইকারি পর্যায়ের মনোপলি এবং অপ্রতুল নজরদারি পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিচ্ছে। পরিসংখ্যানে ইনফ্লেশন কিছুটা কমলেও বাস্তবে মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন। মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে আনা, কৃষিপণ্যের সরাসরি বিপণন চ্যানেল শক্তিশালী করা এবং প্রয়োজনীয় আমদানিতে যৌক্তিক শুল্ক-কর নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারি এবং স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ভোক্তার ওপর নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত চপ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
