সম্পাদকীয়

অচলাবস্থা থেকে বের হতে হবে

সংকটে বস্ত্রখাত

বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প দীর্ঘদিন ধরে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান চালিকাশক্তি হলেও বর্তমানে এ খাত এক নতুন করে সংকটের মধ্যে পড়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, জ্বালানি ঘাটতি এবং উৎপাদন ব্যয়ের লাগামহীন বৃদ্ধি শিল্পকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে অচলাবস্থার দিকে। ইতোমধ্যেই বহু কারখানা উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে, আর যারা টিকে আছে তারাও অর্ধেকের কম সক্ষমতায় কাজ করছে। এর ফলে লাখ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছে এবং সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকি বাড়ছে।এই সংকটের পেছনে শুধু বৈশ্বিক চাপ নয়, নীতিগত দুর্বলতাও বড় ভূমিকা রাখছে। একসময় স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোকে টিকিয়ে রাখতে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হতো ২৫ শতাংশ পর্যন্ত, যা এখন নেমে এসেছে দেড় শতাংশে। এই নীতিগত পরিবর্তন দেশীয় উৎপাদকদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিয়েছে। কম দামে বিদেশি সুতা বাজারে প্রবেশ করে দেশীয় বাজার দখল করছে, আর গার্মেন্ট মালিকদের একাংশ বিদেশি সুতা আমদানির দিকে ঝুঁকছেন। অথচ দেশীয় টেক্সটাইল শিল্প গার্মেন্ট খাতের কাঁচামালের সিংহভাগ সরবরাহ করতে সক্ষম। ফলে একদিকে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের ভেতরেই একটি শক্তিশালী ভ্যালু চেইন গড়ে তোলার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আজ যদি স্পিনিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে যায়, ভবিষ্যতে গার্মেন্ট মালিকদেরই উচ্চমূল্যে বিদেশি সুতা কিনতে হবে। এতে শুধু উৎপাদন ব্যয় বাড়বে না, বরং রপ্তানি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ আরও পিছিয়ে পড়বে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের ব্যাপক বেকারত্ব সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করবে।এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নীতিসহায়তা অপরিহার্য। স্থানীয় সুতা ব্যবহারে নগদ প্রণোদনা পুনর্বহাল ও যৌক্তিক হারে বৃদ্ধি করতে হবে। বিদেশি সুতা আমদানিতে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বা সেফগার্ড ডিউটি আরোপ করা দরকার, যাতে দেশীয় উৎপাদকরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেন। গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা এবং শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি। পাশাপাশি রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামালের একটি নির্দিষ্ট অংশ স্থানীয় উৎস থেকে কেনার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে।সরকারকে বুঝতে হবে, বস্ত্রশিল্পের সুরক্ষা মানে কেবল কয়েকটি কারখানা রক্ষা নয়, বরং দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত এবং লাখ লাখ শ্রমিকের জীবনযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। নীতিগত সুরক্ষা ছাড়া এ শিল্পের পতন ঠেকানো সম্ভব নয়। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে টেক্সটাইলের সংকট গার্মেন্ট খাতকেও গভীর অচলাবস্থায় ঠেলে দেবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button