সম্পাদকীয়

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা রোধে সুসমন্বিত নীতির প্রয়োজন

পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার আবারও অস্থিরতার ইশারা দিচ্ছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে থেকে জানা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দাম কমার প্রবণতা দেখা গেলেও নতুন করে পেঁয়াজের দর বৃদ্ধি এবং শীতের সবজির দাম স্থিতিশীল না থাকা বাজারব্যবস্থার দুর্বলতাকেই আবার সামনে তুলে ধরছে। সরকারের নীতিগত ঘোষণার সুযোগ নিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির চিরায়ত প্রবণতা এ সময় আরও স্পষ্ট হয়েছে। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও প্রকট। সরকার জানায়, পর্যাপ্ত মজুত আছে এবং নতুন পেঁয়াজ শিগগিরই বাজারে আসবে-তাই কৃষকের স্বার্থে আমদানি করা হবে না। এই ঘোষণা বাজার স্থিতিশীল করার কথা, কিন্তু উল্টো প্রভাব পড়েছে। মজুতদাররা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দাম বাড়াতে শুরু করেছে। খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকার বৃদ্ধি। অথচ সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিবি) বলছে, গত বছরের তুলনায় দাম দশ শতাংশ কম। বাস্তবতা হলো-বাজার এখনও মজুতদারদের নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গেছে। সবজির ক্ষেত্রে চিত্র একই রকম। উৎপাদন বাড়লেও পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের সমন্বয় নেই। মাঠপর্যায়ে দর বেশি থাকার অজুহাতে ঢাকায় সবজির দাম কমছে না। শিম, বরবটি, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, পটোল-সব পণ্যের দামই আগের তুলনায় উঁচু। নতুন আলু বাজারে এলেও দাম বেশ চড়া। পাইকারিতে দর বেশি কেন-এ প্রশ্নের জবাবে উৎপাদন এলাকাকে দায়ী করা হলেও, বাস্তবে বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাই এর মূল কারণ বলে মনে হয়। শুধু কাঁচামরিচের দরে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। ডিম, মুরগি, মাছ ও মাংসের বাজারও তুলনামূলক স্থিতিশীল। তবে কিছু পণ্যের স্বস্তি দিয়ে সমগ্র বাজারের অস্থিরতা আড়াল করা যায় না। এই অস্থিরতার মূল কারণ বাজারে কার্যকর নজরদারির অভাব। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবধান অনেক সময় বাস্তব উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমদানি নীতি, কৃষকের স্বার্থ, ভোক্তার স্বস্তি-এই তিনটির ভারসাম্য রক্ষাই বাজার ব্যবস্থাপনার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। কিন্তু নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে মজুতদারদের প্রভাব বেড়ে যায়, যার বোঝা বহন করতে হয় সাধারণ ক্রেতাদের। এ অবস্থায় বাজার ব্যবস্থাপনায় কিছু জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। নীতিগত ঘোষণার আগে পর্যাপ্ত বাজার বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত সরবরাহচেইনের প্রতিটি ধাপ কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। পাশাপাশি মজুতদারদের প্রভাব রোধে নিয়মিত অভিযান ও স্বচ্ছ তথ্যপ্রকাশ বাড়ানো জরুরি। নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক দায়িত্বও। ভোক্তাদের আস্থাহীনতা দূর করতে সরকার ও বাজারসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর ও সুসমন্বিত ভূমিকা পালন করতে হবে-অন্যথায় মৌসুমী সংকটের সুযোগে মূল্যবৃদ্ধি চলতেই থাকবে, আর ভোগান্তি বাড়বে সাধারণ মানুষের।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button