শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাহীনতা দূর করা জরুরি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের আকাশপথের প্রধান প্রবেশদ্বার। প্রতিদিন প্রায় ১৫০-১৬০টি ফ্লাইটে ৩০ হাজারের বেশি যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মৌলিক নিরাপত্তা-ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে যে অব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতির অচলাবস্থা বিরাজ করছে, তা দেশের বিমান চলাচলের জন্য উদ্বেগজনকই বলা চলে। রানওয়ে সুইপার যন্ত্রের তিনটির মধ্যে দুইটি বহু বছর ধরে বিকল, আর একমাত্র সচল যন্ত্রটি দিয়ে এত বড় রানওয়ে পরিচর্যা করা প্রায় অসম্ভব। বাধ্য হয়ে কর্মীরা সনাতন পদ্ধতিতে ঝাড়– ব্যবহার করছেন-যা আধুনিক বিমানবন্দরের মানদ- থেকে বহু দূরে এবং উড়োজাহাজের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রানওয়ের পাশে পাখির ঝাঁক বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা তৈরি করে, কিন্তু সেগুলো তাড়ানোর জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রয়োজনে বিমানবাহিনীকে অনুরোধ করে বন্দুক দিয়ে পাখি তাড়ানো হয়। নিজস্ব অস্ত্র কেনা ও ব্যবহার বিষয়ে জটিল নীতিমালা থাকলেও, এমন মৌলিক নিরাপত্তা প্রয়োজন পূরণে বছরের পর বছর স্থবিরতা অগ্রহণযোগ্য। লাগেজ টানার ট্রলিগুলোর বড় অংশ অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে-এটিও যাত্রীসেবার মান কমিয়ে দেয় এবং অব্যবস্থাপনার আরেকটি প্রতিচিত্র তুলে ধরে। যে বিমানবন্দর দিয়ে বছরে ৮০ লাখ ধারণক্ষমতার বিপরীতে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করছেন, সেখানে পর্যাপ্ত জনবল ও যন্ত্রপাতি না থাকা পরিষ্কারভাবে পরিকল্পনার দুর্বলতার প্রতিফলন। ফলাফল-রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ থেকে লাগেজ সরবরাহ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ধীরগতি ও ঝুঁকি। অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও বিমানবন্দরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মানবসম্পদ ঘাটতি দূর না হওয়া একটি প্রশাসনিক সংকটেরই প্রমাণ। গত ১৮ অক্টোবর কার্গো হাউসের ভয়াবহ অগ্নিকা-ও এ ব্যবস্থাগত দুর্বলতার আরেকটি চিত্র। বেবিচকের নিজস্ব ফায়ার ইউনিটের তিনটির মধ্যে দুটি দীর্ঘদিন অচল থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়েছে। যখন সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে জরুরি যানবাহন অচল থাকে, তখন সেটি কেবল দুর্ভাগ্য নয়-ঝুঁকি তৈরি করা এক ধরনের অবহেলা। বিমানবন্দর উন্নয়ন ও কেনাকাটা-সংক্রান্ত বার্ষিক পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়েছে-এটি ইতিবাচক। তবে যন্ত্রপাতি কেনা, সুইপার ইউনিট ঠিক করা, পাখি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ এবং দক্ষ জনবল নিয়োগ-এসব কাজ বিলম্বিত হলে ঝুঁকি আরও বাড়বে। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ও সেবার মান আন্তর্জাতিক মানদ-ে উন্নীত করা এখনই জরুরি। জনবল সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে-নির্বাহী পরিচালকের এমন মন্তব্য দায়িত্বের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরলেও সংকট সমাধানের দায়িত্ব এড়িয়ে যায় না। যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে, ফ্লাইট বাড়ছে-অন্যদিকে যদি নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণযন্ত্র ক্রমে অকেজো হয়ে পড়ে, তবে বিমান চলাচল ব্যবস্থা বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। শাহজালাল বিমানবন্দর দেশের ভাবমূর্তি বহন করে। এই প্রবেশদ্বারকে নিরাপদ, কার্যকর ও আধুনিক রাখতে প্রয়োজন দ্রুত সিদ্ধান্ত, জবাবদিহি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এখানেই দায়িত্বশীলতার আসল পরীক্ষা।
