বিজয় দিবস: ইতিহাসের দায় ও আগামীর শপথ

১৬ ডিসেম্বর-বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, অগণিত প্রাণের আত্মত্যাগ এবং সীমাহীন যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে এই দিনেই অর্জিত হয়েছিল আমাদের কাক্সিক্ষত বিজয়। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাংলাদেশ পেয়েছিল স্বাধীন পরিচয়, পেয়েছিল নিজের পতাকা ও মানচিত্র। এই বিজয় কোনো হঠাৎ পাওয়া অর্জন নয়। এর পেছনে রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আন্দোলনের ধারাবাহিক সংগ্রাম, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত¯œাত আত্মত্যাগ। বিজয় দিবস তাই শুধু আনন্দের নয়, এটি গভীর দায়িত্ব ও আত্মসমালোচনার দিনও। আজ স্বাধীনতার পাঁচ দশকের বেশি সময় পেরিয়ে এসেও আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করতে হয়-যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, আমরা কি তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? বৈষম্যহীন সমাজ, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদার যে আকাক্সক্ষা ছিল, তা কতটা প্রতিষ্ঠিত? বিজয় দিবস আমাদের সেই প্রশ্নগুলো নতুন করে সামনে এনে দাঁড় করায়। একই সঙ্গে বিজয় দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইতিহাস বিকৃতির বিপদের কথা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু স্লোগানে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না; তা শিক্ষায়, রাজনীতিতে, প্রশাসনে এবং সামাজিক আচরণে প্রতিফলিত হতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা আজ সময়ের অন্যতম দাবি। এই দিনে আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে হয় সেইসব শহীদদের, যাঁরা নিজের জীবন উৎসর্গ করে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। শ্রদ্ধা জানাতে হয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, যাঁদের সাহস ও দৃঢ়তায় রচিত হয়েছে এই বিজয়ের ইতিহাস। তাঁদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সমাজ-উভয়েরই নৈতিক দায়িত্ব। বিজয় দিবস কেবল অতীত স্মরণের দিন নয়; এটি ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রেরণাও। দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সামাজিক ন্যায়বিচার ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়াই হতে পারে শহীদদের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা। লাল-সবুজ পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে আজ এই অঙ্গীকারই হোক-স্বাধীনতার মূল্য যেন কোনোদিন ভুলে না যাই, বিজয়ের চেতনাকে যেন প্রতিদিনের কাজে ধারণ করি। তবেই বিজয় দিবসের তাৎপর্য হবে সত্যিকার অর্থে পূর্ণতা পাওয়া।
