বিজয় দিবস : জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার নতুন শপথ

প্রবাহ রিপোর্ট : ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল…’। এই ডিসেম্বরের কুয়াশা মোড়ানো এক ভোরে বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার নতুন সূর্য, উড্ডীন হয়েছিল লাল-সবুজ পতাকা। বাতাসে অনুরণন তুলেছিল অগণিত কণ্ঠের সুর ‘আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালোবাসি…।’এ দিনটি তাই একদিকে যেমন এ দেশের মানুষের কাছে চিরগৌরব ও আনন্দের, তেমনি একই সঙ্গে স্বজন হারানোর বুকভাঙা আর্তনাদের আর বেদনার।
আজ মঙ্গলবার ১৬ ডিসেম্বর, এ দেশের বিজয়ের ৫৪ বছর পূর্তির দিন। মহান বিজয় দিবস। এই দেশের মানুষ চিরকাল এই দিনটির জন্য গর্ববোধ করবে। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙ্গালি জাতি এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাম সংযোজিত করেছিল। এর মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার স্বীকৃতি মেলে। প্রতি বছর দেশের মানুষ এই দিনটিকে আনন্দ উচ্ছ্বাসের মাধ্যমে পালন করে।
পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে যখন এ দেশের ঘুমন্ত নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাংক-কামানের মতো ভয়ংকর মারণাস্ত্র নিয়ে নৃশংস গণহত্যার পৈশাচিকতায় মেতে উঠেছিল, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল প্রতিরোধ সংগ্রাম, মুক্তির জন্যে যুদ্ধ।
দেশের বীর সন্তানেরা তখন যুদ্ধের ময়দানে ছুটে গিয়েছিলেন শত্রুর মোকাবিলায়। জীবনের মায়া তাঁদের কাছে ছিল তুচ্ছ। তাঁদের ছিল না যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, ছিল না কোনো উন্নত সমরাস্ত্র। আক্ষরিক অর্থেই যার কাছে যা ছিল, তা নিয়েই দেশের বীর সন্তানেরা শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মরণপণ লড়েছিলেন মুক্তির সংগ্রামে।
দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধ করেছিলেন দেশের সব ধর্ম, বর্ণ, ভাষার বীর সন্তানেরা। শেষ পর্যন্ত ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল সম্পদহানির ভেতর দিয়ে মুক্তির সংগ্রামে সফল হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ছিনিয়ে এনেছিলেন চূড়ান্ত বিজয়। জাতিকে মুক্ত করেছিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে।
গত ১৬ বছর ধরে পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি করে ঔপনিবেশিক ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির মাধ্যমে দেশকে বিভাজিত করে বাংলাদেশকে লুটেপুটে খেয়েছে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ। এই বিভাজনকে সহ্য করতে পারেনি দেশের মানুষ। ফলে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ফের শুরু হয় লড়াই-সংগ্রাম। অবশেষে ৭১ এর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এক নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।
নতুন শুরু হওয়া এ যাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরে এবারের বিজয় দিবস জাতির সামনে এক নতুন প্রত্যাশা নিয়ে হাজির হয়েছে।
তারা বলেছেন, বদলে যাওয়া নতুন বাংলাদেশে, বিজয় দিবসের মাহেন্দ্রক্ষণে আনন্দের সঙ্গে রয়েছে ঘোর সংশয়। ফ্যাসিবাদী অপশক্তি আবারো মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে গণতন্ত্রের উত্তরণের প্রাক্কালে সুদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে বিজয়ের আনন্দ চিরস্থায়ী হবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রথম বিজয় দিবস আমরা গত বছর পালন করেছি। সেই বিজয় দিবসের আনন্দ উৎসব বিজয় উল্লাস ছিলো অন্যরকম। মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে মানুষ মন ভরে বিজয়ের স্বাদ গ্রহণ করেছে। এরপরে এক বছর পার হয়ে গেলেও নানা পরিক্রমার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিতর্কের কারণে কিছু বিভক্তি দৃশ্যমান হয়েছে। এসব বিভক্তির ফলে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী শক্তি আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, সেটা এখন দৃশ্যমান। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার পরে একটি ঘটনায় ( হাদির ওপর হামলা) বেদনা বিধুর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করতে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং তার দোসররা সকল চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই সময়ে আমাদেরকে প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তি ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্য এখন সবচাইতে বেশি জরুরি। কারণ, এর মাধ্যমেই আমরা কেবল মাত্র সন্ত্রাসবাদী, গণতন্ত্র বিরোধী তৎপরতা বা ফ্যাসিবাদী শক্তির মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার যে অপচেষ্টা, সেটা রুখে দিতে পারব।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এদেশের সব মানুষেরই সংগ্রাম ছিল। ৭১ কে যারা দলীয়করণ করতে চেয়েছে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এখন চব্বিশের গণ-অভ্যূত্থানে শহীদদের রক্তের আকাঙ্ক্ষা, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির প্রত্যাশা। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং হারানো মানবাধিকার ফিরে পেতে চেয়েছে। এগুলোর সমষ্টিগত অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান কাজ হলো-ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে জাতীয় শক্তিতে পরিণত করা। একইসঙ্গে আগামী দিনের সকল কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃতপক্ষে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারব। এটাই আমাদের বিজয়ের উচ্ছ্বাস, জাতীয় প্রত্যাশা এবং শহীদদের রক্তের ঋণ শোধের উপায়।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় দিবস জাতির ইতিহাসে আত্মত্যাগের মহিমায় এক গৌরবের দিন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়।
চব্বিশের ছাত্র-জনতার বিপ্লব মুক্তিযুদ্ধকে পরিপূর্ণতা দানে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটে জাতির আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই বিজয়ের এই দিনে সকলের প্রতি আহ্বান থাকবে আসুন, আমরা সকল বিভেদ ভুলে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সম্মিলিতভাবে কাজ করি।
বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সকল শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রামী জনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, মুক্তির লড়াইয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, মহান আল্লাহর দরবারে তাদের সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। তাদের ত্যাগের বিনিময়েই আমরা স্বাধীন, সার্বভৌম ও মর্যাদাপূর্ণ একটি রাষ্ট্র পেয়েছি।
তিনি বলেন, বিজয়ের দিনে আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, সমৃদ্ধ, সাম্য ও সামাজিক ন্যায় বিচার ভিত্তিক মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার তওফিক দান করেন।
অন্তর্র্বতী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের মানুষের উপনিবেশ বিরোধী লড়াই থেকে শুরু করে পাকিস্তান আন্দোলন হয়ে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান সবগুলোর ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘসময় ধরে নিজেদের মর্যাদা ও পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে এসেছে। ফলে ২০২৪-কে ১৯৭১-এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর যে প্রচেষ্টা সেটি আমরা প্রত্যাখ্যান করি।
মাহফুজ আলম বলেন, কেউ কেউ ১৯৭১-কে ১৯৪৭-এর ‘অ্যান্টিথিসিস হিসেবে দেখেন, কিন্তু আমরা এটিকে ঐতিহাসিকভাবে ভুল বলে মনে করি। বরং প্রতিটি পর্বেই বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের আত্মমর্যাদা, গণতন্ত্র, ভাষা ও সংস্কৃতিসহ নিজেদের পরিচয় রক্ষা এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রেখেছে। ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান—প্রতিটি প্রজন্মই এই দীর্ঘ লড়াইয়ের অংশ হিসেবে নিজেদের ভূমিকা রেখেছে।
তিনি বলেন, তাই ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবকে আগের সংগ্রামগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সব আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল এই ভূখ-ের মানুষের স্বাধীনতা, মুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ যতবারই অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক উপনিবেশিকতার শিকার হয়েছে, ততবারই বাংলাদেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
মাহফুজ আলম আরো বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত এই দীর্ঘ সময় লড়াই চলেছে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে। আর ১৯৭১-এর পর সেই লড়াই রূপ নিয়েছে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মানুষের মর্যাদার এই সংগ্রামে ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪—সবই একই সুতোয় গাঁথা।
বিজয় দিবস উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ লড়াই, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের কোনো শহীদের রক্তের রঙ আলাদা নয়। সবাই এই মাটির মানুষ, এই মাটির পক্ষে লড়া সৈনিক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিজয় দিবসে আমি গভীরভাবে স্মরণ করছি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদকে। সেই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদেরও আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। ১৯৭১ সালে আমাদের বিজয় আসলেও সেই স্বাধীনতা অরক্ষিত ছিল। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছে। ২০২৪ সালের এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশে জনগণ প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ অনুভব করছে।
তিনি বলেন, আমি জীবনভর অনেক আন্দোলন, সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। বিজয়ী হয়েও বারবার হেরে গেছি। অনেক বিজয় এসেছিল, ধরে রাখতে পারিনি। এখন প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, গুম হয়েছেন কিংবা যারা চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে জীবন দিয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগ আমরা ধরে রাখতে পারব তো? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমরা সব সময়ই বলি, ভালো চাই, আরও ভালো চাই৷ আমাদের পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই৷ কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাদের সুযোগ করে দিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানের বিজয় ধরে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অক্ষণ্ন রাখার। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে জনগণের যে সকল প্রত্যাশা আমরা পূরণ করতে পারিনি, তা বাস্তবে রূপ দেয়া। বিজয় ধরে রাখতে তাই সকলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক, ডাকসুর সাবেক ভিপি, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, বিজয় দিবসের তাৎপর্যকে কেবল অতীতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। এটি একটি নৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রগতিশীল অঙ্গীকারের দিন। সুদীর্ঘ লড়াইয়ের পর ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান চরম সত্যটি উন্মোচিত করেছে—যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, তার অভ্যন্তরে এখনো সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার ভিত্তিক প্রজাতন্ত্র অনুপস্থিত।
তিনি বলেন, নতুন বাস্তবতায় বিজয় দিবসের নতুন পাঠ। এই নতুন এবং কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতায়, বিজয় দিবসে ‘৭১ ও ২৪ এর গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান কর্তব্যটি যুক্ত হয়ে যায়। সেই কর্তব্যটি হলো: ঔপনিবেশিক নিপীড়নমূলক, স্বৈরাচারী বা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা উচ্ছেদ করে সকল জনগণের অংশগ্রহণ ভিত্তিক নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল শোষণমুক্ত সমাজ, জনগণের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ নাগরিক জীবন নিশ্চিত করা। দীর্ঘ স্বৈরশাসন ও বৈষম্যের ফলে সেই চেতনা বারবার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
আ স ম আবদুর রব বলেন, বিজয় কোনো স্থির বা স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং নিরন্তর সংগ্রামের নাম। যখন শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়, তখন আমাদের বিজয় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সেই অসম্পূর্ণতা পূরণের এক ঐতিহাসিক ডাক দিয়েছে। সুতরাং, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই বিজয় দিবসের প্রকৃত লক্ষ্য হবে- বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণ করা, যেখানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার সুরক্ষিত থাকবে। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করা-কোনো অভ্যন্তরীণ বা বহিরাগত শক্তি যেন রাষ্ট্রীয় অখ-তায় হস্তক্ষেপ করতে না পারে। প্রজাতন্ত্রের ওপর জনগণের প্রকৃত মালিকানা অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আজকের বিজয় দিবস হোক বৈষম্যহীন প্রজাতন্ত্র নির্মাণ এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশীদারিত্বের গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি পূরণের নতুন অঙ্গীকার।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, এবারকার বিজয় দিবস নতুন প্রত্যাশার দ্বার উন্মোচন করেছে। বিশেষ করে দীর্ঘ ১৬ বছর পর আমরা একটা অসাধারণ গণজাগরণ ও গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন বিজয় পেয়েছি। তাই এবারের বিজয় দিবস বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমরা যে বিজয় অর্জন করেছিলাম এর মধ্যে দিয়েই আমরা মূলত বিজয়ী জাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক দশকে আমাদের বিজয়কে অনেকখানি পরাজয়ে পর্যবসিত করা হয়েছিল।
সাইফুল হক আরো বলেন, যদি উদাহরণ দিয়ে বলি- আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার এটাই ছিল প্রধান বিষয়। যার ভিত্তিতে ৭২ এর সংবিধান তৈরি হয়। গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশ ভূতের মতন কিছুটা পেছনে হেঁটেছে। পাকিস্তানি জামানার মতন এক দেশে দুই অর্থনীতি এবং দুই সমাজ কায়েম হয়েছে। মানুষদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আশা ভঙ্গ হয়েছে। ফলে দেশের মানুষের তাদের প্রত্যাশার জায়গায় ভীষণভাবে হোঁচট খেয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির এই শীর্ষ নেতা বলেন, এবারকার গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান বিষয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মানে সেটা কোন ধম বর্ণ লিঙ্গ বা কোন ক্ষেত্রেই বৈষম্য করা যাবে না। সুতরাং জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছি। জাতি হিসেবে আমাদের নানা প্রশ্ন কিংবা দ্বিমত থাকবে কিন্তু বড় দাগে- স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়তে আমরা যদি জাতীয় ঐক্য যদি গড়ে তুলতে পারি তাহলে এবারকার বিজয় দিবস নতুন তাৎপর্য ও নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের সামনে আসবে।
আমি প্রত্যাশা করি, এবারের বিজয় দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অসম্পূর্ণ রাজনৈতিক কর্তব্য সম্পন্ন করার শপথ নেবো। একটা সাম্যভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক দায়বদ্ধ রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান তৈরি করতে পারলেই আমাদের বিজয়ের আনন্দ পরিপূর্ণতা পাবে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান দুটো পরিপূরক কি না এমন প্রশ্নে সাইফুল হক বলেন, একাত্তর গোটা রাষ্ট্রের গড়ে ওঠার পেছনের একাত্ম ভিত্তি। আর ২৪ এর গণজাগরণ জাতির সামনে নতুন প্রত্যাশার দ্বার উন্মোচন করেছে। নতুন চিন্তা চেতনা এবং অনেকগুলো অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার ডাক নিয়ে হাজির হয়েছে। গণতান্ত্রিক সাম্যভিত্তিক একটা বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। ফলে ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানেরও আলাদা তাৎপর্য আছে। সবকিছু মিলেই আমাদের অর্জন। সে কারণে ২৪ কে হাইলাইট করতে গিয়ে যদি ৭১ কে প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত করি তাহলে আমরা আত্মঘাতী পথের দিকেই যাবো।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি ঠিকই কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা আজও অর্জিত হয়নি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি। বৈষম্যহীন সমাজ, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়নি। তবে ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে এবারের বিজয় দিবস আমাদের জন্য নতুন প্রত্যাশার দ্বার উন্মোচন করেছে। জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। ফলে আগামীতে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা দেশের সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারব বলে আশা করি।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যেন কোনো বাধা না আসে সে লক্ষ্যে দল মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল সবাই মিলে একাযোগে কাজ করছি। লক্ষ্য একটাই একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন কায়েম এবং দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
সেলিমা রহমান বলেন, আজকে তরুণ প্রজন্ম বলছে, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকেও ছাপিয়ে যায়। তবে আমি মনে করি, প্রতিটি প্রজন্মের নতুন চিন্তাধারা থাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের শোষণের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তখনকার তরুণ সমাজ, শ্রমিক জনতা থেকে শুরু করে সবাই একযোগে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানেও ছাত্র জনতা বৈষম্য দূর করতে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। ফলে দেশ থেকে স্বৈরাচার বিতাড়িত হয়েছে। কাজেই প্রতিটি গণঅভ্যুত্থানেরই একটা বিশেষ মূল্য আছে। সেই মূল্য- একটার সঙ্গে আরেকটার তুলনা করা যাবে না। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার স্বীকৃতি।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো- বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে আমরা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান রচনা করতে পারতাম না। এবারের বিজয় দিবস প্রবীণ-নবীন, বৃদ্ধ-কিশোর ও শিশু, শ্রমিক-সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র-জনতা সবাই মিলে আনন্দ উচ্ছ্বাসের সঙ্গে উদ্যাপন করবো।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যেকোনো বিজয়ের মূল লক্ষ্য হলো সমাজের প্রগতি, অগ্রগতি। সমাজের যে সকল পশ্চাৎপদতা রয়েছে, সেটা গণতন্ত্র, অর্থনীতি কিংবা জীবনবোধ সে যাই হোক না কোন প্রতিটি অভ্যুত্থান, প্রতিটি বিজয় শেষ পর্যন্ত সমাজের সকলের মুক্তির কথা বলে। সেই হিসেবে আমাদের ৭১ এর বিজয়টাও পরিপূর্ণ হয়নি। এমনকি, কোন বিজয়ই শেষ পর্যন্ত ওই অর্থে পরিপূর্ণ হয় না, কারণ, যত সময় যায় ততই নানা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নতুন নতুন প্রশ্ন ও সমস্যা সামনে আসে। সেগুলোকে আমরা ওই আগের বিজয়ের স্পিরিটে সমাধানের চেষ্টায় এগিয়ে যেতে থাকি। তবে তা পুরোপুরি আর সমাধান আর হয় না।
তিনি বলেন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জাতির আকাঙ্ক্ষা ছিল এই লড়াই যেন চূড়ান্ত লড়াই হয়, যাতে আমরা একটা সমাজ পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাই। কিন্তু নয় মাস যুদ্ধ শেষে যে বিজয় আমরা অর্জন করেছিলাম, সময়ের ফাঁক-ফোকরে তা ম্লান হয়ে গেছে।
’৭১-এর ধারাবাহিকতা হলো ‘২৪, এ কথা উল্লেখ করে মান্না বলেন, ১৯৭১ সালের সমতা, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুনভাবে নিশ্চিত হয়েছে। মুজিববাদ ’৭১-কে ভারতীয় ন্যারেটিভে অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বিসর্জনের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ’২৪ সেই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে পুনরুদ্ধার করেছে।
তিনি বলেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমরা নতুন বিজয় পেয়েছি। স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা অসাধারণ এবং অভূতপূর্ব লড়াইয়ে আমরা জয়ী হয়েছি। তবে ৭১ এর মতো এবারো আমরা বিজয়ের স্বাদ পরিপূর্ণ ভোগ করতে পারিনি। কারণ, প্রতিনিয়ত নতুন আঙ্গিকে আমাদের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম বড় বিষয় হচ্ছে- গণতান্ত্রিক উত্তরণের মাধ্যমে পুনরায় বিজয় অর্জন, যা আমরা এখনো হাতের নাগালে ধরতে পারিনি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই এই বড় চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারি। এই অভিপ্রায়ে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ বটে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপরে হামলা হয়েছে। আগামীকাল আমার ওপরে হবে না তার তো কোন গ্যারান্টি নেই। বোঝা যাচ্ছে না কি হবে! এই রাষ্ট্র কি আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে? এমন শঙ্কার মধ্যে বিজয়ের আনন্দ আসলে ফিকে হয়ে যায়। তবুও ওভারপাস করে আমাদেরকে বিজয়ের জায়গায় পৌঁছাতে হবে। সেই লড়াইটাই এখন চলছে, চলবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেছেন, এই বিজয় দিবসে ৭৩ এর বিজয় দিবসের একটা ছাপ আছে। ৭১এর যুদ্ধজয়ের পরে ৭২ এবং ৭৩ এর বিজয় দিবসে এক ধরনের হতাশা ছিলো। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই হতাশ। কারো কারো বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অভিযোগ, অস্থিরতা, আশঙ্কা এগুলো যেমন ছিলো, বর্তমান অবস্থা ঠিক তেমনই। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে এবারের যে বিজয় দিবস আগে যে হতাশা অস্থিরতা তা প্রায় একইরকম মনে হয়। এগুলো থেকে শিক্ষা নিলে এবার হয়তো আমরা অন্যরকম একটা বিজয় দিবস পেতে পারতাম, কিন্তু আমরা কখনোই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না। এটাই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, ৫৪ বছর পরে এসে সেই ৭১ এর পরের একই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তখন যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলো, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছিলো তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে এটার মালিকানা চলে গিয়েছিলো শেখ মুজিবর রহমানের পরিবারের কাছে। আন্দোলন বা যুদ্ধের মালিকানাকে কেন্দ্রীভূত করা হয়েছিল সম্পদ দখলের কাজে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবারের যুদ্ধের পরে একই রকমের প্রাতিষ্ঠানিক কায়দায় সেটার মালিকানাকে খুব ছোট করা হয় এবং যাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মালিক বানানো হয় তাদের কাউকে ভুল বুঝিয়ে, প্রলুদ্ধ করে চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করা হয়।
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, এসব কারণেই ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে পাওয়া এতো বড় অর্জন অতি অল্প সময়ের মধ্যে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, এমন একটা মনস্তত্ত্ব গ্রাস করছে সবাইকে। তবুও এ অবস্থা পাশ কাটিয়ে রাজনীতিবিদরা চেষ্টা করছে এই অর্জনকে রক্ষা করার। সুতরাং সেদিক থেকে এবারের বিজয় দিবস তাৎপর্যপূর্ণ যে নতুন করে ৭১ এর বিজয়ের মতো ২৪ এর বিজয় যাতে হাত ছাড়া না হয়। ৭১ এর মতো কোনো চূড়ান্ত দুূর্ভাগ্যজনিত পরিণতির দিকে না যায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখা, সেভাবে সতর্ক থাকা এবং সেই চেষ্টা করা দরকার। এটাই হচ্ছে এবারের বিজয় দিবসে আমার উপলব্ধি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে আমরা ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের ধারাবাহিকতা বলে মনে করি। আওয়ামী লীগ শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধকে নিজস্ব সম্পত্তি বানানোর যে অপচেষ্টা চালিয়ে এসেছে তা ২৪-এ এসে পুরোপুরি ধসে পড়েছে। আওয়ামী দুঃশাসন, লুটপাট, অপতৎপরতা ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অত্যধিক ক্রেডিট ক্যাশ করার মানসিকতা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কলঙ্কিত করেছে, পাশাপাশি শেখ মুজিবুর রহমানকেও মানুষের মনের মধ্যে বিতৃষ্ণ করে তুলেছে, এর পুরো দায় আওয়ামী লীগের।
তিনি বলেন, আমি মনে করি ৫ আগস্টের পর মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য আরও বেশী প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। গণঅভ্যুত্থানের পর বিজয় দিবসকে আমি দেখি আত্মোপলব্ধি ও রক্তস্নাত সংগ্রামের স্মৃতিময় মিলনরেখা হিসেবে। আজকে বিজয় দিবসে আমরা নতুন করে ফাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার শপথ নেই। ১৯৭১ ও ২০২৪-এর রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পথ ধরে ফ্যাসিবাদী বৈষম্য ও দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে শোষিত জনতার অবিস্মরণীয় যে বিজয় আমরা পেয়েছি সেটাকে কোনোভাবেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত করা যাবে না।
