নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা জরুরি

ভূমন্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক উপাদান হচ্ছে পানি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ, আমাদের ভূমন্ডলের চার ভাগের তিন ভাগই পানি। পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় ৭১% জায়গা জুড়ে বিরাজমান রয়েছে বিশাল পানিরাশি। পানির বিশাল আধার থাকা সত্ত্বেও আমরা বেশিরভাগ পানি ব্যবহার করতে পারি না, কারণ মোট পানিরাশির প্রায় ৯৭% লবণাক্ত বা সামুদ্রিক পানি, যা আমরা সরাসরি ব্যবহার করতে পারি না। আমাদের ব্যবহারযোগ্য পানির পরিমাণ খুবই সীমিত যা প্রায় ৩%। এর মধ্যে বায়ুমন্ডলে ০.০১%, হিমবাহগুলোতে ১.৭২৫%, মাটিতে ০.০০১২%, ভূভাগে ০.১৪১% এবং ভূগর্ভে ০.৪-১.৭% পানি সঞ্চিত রয়েছে। পানিকে বিশ্লেষণ করলে এক অনু অক্সিজেন ও দুই অনু হাইড্রোজেন পরমাণু পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ পানি বা নিরাপদ পানি বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে স্বচ্ছ, বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন পানি। বিশুদ্ধ বা নিরাপদ পানিতে শরীর গঠনের বিভিন্ন উপকারী উপাদান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ইত্যাদি থাকে। ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত নিরাপদ পানি আমরা সরাসরি পান করতে পারি। এছাড়া অন্য সকল উৎস থেকে প্রাপ্ত পানিকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পান করতে হয়। বৃষ্টির পানিকেও নিরাপদ পানি বলা হয়ে থাকে কিন্তু বৃষ্টির পানিও সরাসরি পান করা যায় না। বর্তমানে আমরা যে পানি পান করি তা কতটা নিরাপদ সে বিষয়টি নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার বিষাক্ত হয়ে পড়া পানি শোধন করতে মেশানো হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন, লাইম (চুন) ও অ্যালাম (ফিটকিরি)। ফলে শোধনের পর অনেক সময় পানিতে ক্লোরিনের গন্ধ পাওয়া যায়। আবার পুরনো পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করায় অনেক সময় দুর্গন্ধ পাওয়া যায় পানিতে। কিছু এলাকায় পাইপলাইনে ফুটা করে অবৈধভাবে পানির লাইন দেওয়া হয়েছে। সেসব ফুটা দিয়ে ময়লা প্রবেশ করে পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে ফুটানোর পরও সেই পানি দূষণমুক্ত হচ্ছে না। তাই অনেকেই নিরাপদ ভেবে ব্যবহার করছে জারের পানি। কিন্তু সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, জারের পানি বিক্রি করে বিভিন্ন পানি বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দুই হাতে টাকা আয় করলেও সে পানিও জনস্বাস্থ্যের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। আমরা মনে করি, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে যে একটি সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত জাতীয় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন, তা সম্ভব হয়নি। এজন্য দায়ী স্বয়ং রাষ্ট্র এবং বিভিন্ন সময় সরকারের দায়িত্ব পালনকারীরা। একই সঙ্গে দায় রয়েছে প্রত্যেক মানুষের। এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতার ঘাটতি যেমন রয়েছে; তেমনি এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে আর্থিক সংগতির বিষয়টিও। ফলে সবার জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হলে বৃহৎ পরিসরে, অর্থাৎ প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শুরু করে শহর-নগর পর্যন্ত অবকাঠামো উন্নয়নসহ নিরাপদ পানির উৎস বাড়াতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ জরুরি। পাশাপাশি জরুরি জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
