সম্পাদকীয়

শহীদ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হোক

অকুতোভয় জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরীফ ওসমান বিন হাদি। এখন হাদি কেবল একটি নাম নয় বিদ্রোহী এক কণ্ঠস্বর, প্রতিবাদের প্রতীক। শত হুমকি ও শত্রুর ভয় তাকে কখনও দমাতে পারেনি। হাদি নিজেও শহীদি মৃত্যু কামনা করেছিলেন। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি দেশ ও বিদেশের চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনাকে যদি হত্যা করা হয়, কিন্তু সেই রক্তের বিনিময়ে শহীদি মৃত্যুতে যদি নতুন বাংলাদেশ গড়ে ওঠে, তাহলে আগামী এক হাজার বছর বাংলাদেশের মানুষ আপনার জন্য নামাজে দোয়া করবে।’ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন (মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর) থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন হাদি। গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে গিয়ে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনে তিনি ‘চা-শিঙাড়া আড্ডা’র মতো ব্যতিক্রমী কর্মসূচির আয়োজন করে আলোচনায় আসেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামোগত দুর্বলতার সমালোচনা করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। পুরোনো ধারার রাজনীতির কঠোর সমালোচক হাদির মতে, সেই ধারায় ক্ষমতায় এলে কেউ দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারবে না। হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে গত বৃহস্পতিবার রাতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমবেত হন। এ সময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘আমরা সবাই হাদিই হব, যুগে যুগে লড়ে যাব’, ‘এক হাদি লোকান্তরে, লক্ষ হাদি লড়াই করে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই’, ‘ওই হাসিনা দেইখা যা, রাজপথে তোর বাপেরা’—এমন নানা স্লোগান দেন। এরই মধ্যে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, ওসমান হাদিকে গুলি করা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান ওরফে রাহুল ও তাঁর সহযোগী মোটরসাইকেলচালক আলমগীর শেখ এখনো গ্রেপ্তার হননি। তাঁদের মধ্যে ফয়সাল নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আলমগীর যুবলীগের নেতা। তদন্ত–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাঁরা দুজনই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। এটা বড় ধরনের গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলেই আমরা মনে করি। শরিফ ওসমান হাদির হত্যা পরিকল্পনা ও হত্যার সঙ্গে জড়িত কারা, সেটা অবশ্যই যথাযথ তদন্ত করে বের করে আনতে হবে। এ হত্যাকা-ে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, সবাইকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button