ভিটামিন ডি-স্বল্পতায় বাসা বাঁধছে জটিল রোগ

দেশে ভিটামিন ডি-স্বল্পতায় ভুগছে এমন শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অন্য বয়সি মানুষ বিশেষ করে নারী ও বয়স্করাও ভিটামিন ডি-স্বল্পতায় ভুগছেন। ভিটামিন ডি এক ধরনের অণুপুষ্টি কণা বা মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। এ কণা মানুষের সামান্য পরিমাণে দরকার হয়, কিন্তু প্রতিদিনই তা দরকার। মানুষের চাহিদার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভিটামিন ডি আসে খাদ্য থেকে। বাকি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের উৎস সূর্যের আলো। ভিটামিন ডির ঘাটতির কারণে শিশুদের রিকেট হয়। এতে হাড় নরম ও দুর্বল হয়, কঙ্কাল বিকৃত হয়। বয়স্করা ‘অস্টিওম্যালাসিয়া’ রোগে আক্রান্ত হন, এতে হাড়ে ব্যথা হয় ও মাংসপেশি দুর্বল হয়। দীর্ঘদিন ভিটামিন ডির অভাবে বয়স্ক নারী-পুরুষ ‘অস্টিওপোরোসিসে’ আক্রান্ত হন। এতে হাড় পাতলা হয়, হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এসব মানুষের উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বেশি দেখা দেয়। এ দেশের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষের ভিটামিন ডির ঘাটতি আছে। এটি একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে সুষম খাবারের ঘাটতি রয়েছে। মানুষ খাবার খাচ্ছে, কিন্তু আমরা যেটাকে সুষম খাবার বলি, যেখানে— ক্যালোরি, নিউট্রিশন, প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ—সবমিলিয়ে থাকবে, খাবারের সেই জায়গাটায় ঘাটতি রয়েছে। কেউ কেউ কার্বোহাইডেড বেশি খাচ্ছে, কেউ আবার প্রয়োজন মতো খাচ্ছেও না। পাশাপাশি বিভিন্ন ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে যেসব খাবার, সেখানেও ঘাটতি আছে—এটা একটা কারণ। আর একটা কারণ হচ্ছে, শরীরে খাবার ঠিকমতো শোষণ না হওয়া একটাও একটা কারণ। আমাদের দেশে রোদ যথেষ্ট এবং মানুষ সেই রোদের সংস্পর্শেও আসে। তবে যেসব খাবারে ভিটামিন ডি আছে সেগুলো পরিমাণ মতো না খাওয়ার কারণে ডি এর ঘাটতি বাড়ছে। ভিটামিন ডি’র ঘাটতিতে ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়, ভিটামিন ডি এর অভাবে আমাদের হাড়ে যে ক্যালসিয়াম ডিপজিশন তা ঠিকমতো হয় না। হাড়গুলো দুর্বল হয়ে যায়, নরম হয়ে যায়, ফলে সহজে হাড় ভেঙে যেতে পারে। এই ভিটামিনের অভাবে হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহতসহ বিভিন্ন মারাত্মক অসুখ হতে পারে, যেমন রিকেটস, হাড়ের বিকৃত গঠন, অস্টিওম্যালেসিয়া এবং ডায়াবেটিস, ক্যানসার, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক রোগ হতে পারে। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে হলে নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা প্রথম শর্ত। দেশের ৬৭ শতাংশ মানুষ যদি পুষ্টিহীনতা ও হাড়ের দুর্বলতা নিয়ে বেড়ে ওঠে, তবে জাতির ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই ভিটামিন ‘ডি’র ঘাটতিকে অবহেলা না করে একে একটি জাতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। দেশের মানুষকে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানাতে ও সচেতন করতে হবে।
