নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা উদ্বেগ: আস্থার পরিবেশ গঠনে সমন্বিত প্রস্তুতি জরুরি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন। রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয় থেকে শুরু করে উপজেলা নির্বাচন অফিস ও ভোটকেন্দ্র-সব পর্যায়ে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি প্রশাসনিক বাস্তবতার প্রতিফলনই তুলে ধরেছে। বৈঠকে বিভিন্ন জেলার ডিসি-এসপিদের বক্তব্যে বিশেষভাবে উঠে এসেছে নির্বাচন অফিসের ঝুঁকিপূর্ণতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল ও বাজেটের সীমাবদ্ধতা এবং অস্ত্র উদ্ধার ও বর্ডার অঞ্চলে নজরদারি জোরদারের প্রয়োজনীয়তা। কিছু জেলায় আনসার মোতায়েন বিলম্বিত হওয়া বা বাজেট স্বল্পতার কারণে নিরাপত্তা প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে-এ অভিযোগও গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে। নির্বাচনী সামগ্রী পরিবহনে বিজিবিকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব ও ভোটকেন্দ্রে ৪৮ ঘণ্টা আগে বাহিনী মোতায়েনের সুপারিশ নিরাপত্তা ঝুঁকিকে প্রতিরোধমূলক দৃষ্টিতে দেখার প্রয়াসেরই ইঙ্গিত। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা, অস্ত্রের উপস্থিতি এবং সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা-এসব বিষয় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্বেগে যে জায়গা দখল করেছে, তা দেখায় নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় কেবল বাহিনী মোতায়েনই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন গোয়েন্দা সমন্বয়, তথ্য যাচাই ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা। অন্যদিকে ভোটার উপস্থিতি কমে যাওয়ার শঙ্কা এবং “না ভোট”প্রাপ্তির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে-নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি আস্থার পরিবেশ তৈরি করাও বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও উসকানিমূলক ঘটনার দ্রুত প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য সময়োপযোগী নির্দেশনা হিসেবেই বিবেচ্য। এই প্রেক্ষাপটে কয়েকটি বিষয় নীতিগতভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে নিরাপত্তা বরাদ্দ ও জনবল পুনর্বিন্যাস করতে হবে, যাতে বাজেট বা কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা নিরাপত্তা প্রস্তুতিতে বাধা না হয়। এছাড়াও নির্বাচন অফিস ও ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা শুধু নির্বাচনের দিন নয়-আগাম সময় থেকেই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি অভিযোগ গ্রহণ ও প্রতিক্রিয়ার কাঠামো মাঠ পর্যায়ে দৃশ্যমান ও সহজপ্রাপ্য করতে হবে, যাতে ভোটার ও প্রার্থীদের আস্থা বাড়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা মোকাবিলায় তথ্যভিত্তিক ও স্বচ্ছ যোগাযোগ কৌশল প্রয়োজন। নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কেবল প্রশাসনিক ঘোষণা দিয়ে নিশ্চিত করা যায় না; এর জন্য দরকার নিরাপদ পরিবেশ, ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া এবং কার্যকর সমন্বয়। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের খোলামেলা আলোচনায় যে বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো উঠে এসেছে, তা সমাধানে দ্রুত, সমন্বিত ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপই হতে পারে আস্থার পরিবেশ গঠনের প্রধান ভিত্তি।
