চামড়া শিল্পকে ঝুঁকিমুক্ত করুন

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। পোশাক শিল্পের পর এটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানিমুখী শিল্প খাত। সুতরাং এ খাতের উন্নতি দেশের অর্থনীতির জন্য আবশ্যক। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়, যা শিল্পের জন্য বড় অবলম্বন। তবে দুঃখের বিষয় এই যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই শিল্প নানা সংকট, অনিশ্চয়তা ও সর্বোপরি অব্যবস্থাপনার কারণে হোঁচট খাচ্ছে। অথচ সঠিক পরিকল্পনা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে এটি হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের শক্তিশালী ক্ষেত্র। চামড়াশিল্প বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ- বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য যেখানে এটি অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। চামড়া শিল্পের শুরু হয় চলিস্নশের দশকে। ১৯৪০ সালে রণদা প্রসাদ সাহা একটি ট্যানারি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে ট্যানারি শিল্প স্থাপিত হয়। এরপর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রেখে চলছে। চামড়া শিল্প দেশের অর্থনীতিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। চামড়া রফতানির ক্ষেত্রে এক সময় বেশ নাম ছিল বাংলাদেশের। এখাতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করত আমাদের এই বাংলাদেশ। কিন্তু বর্তমানে আগের সেই সুদিন আর নেই। চামড়াশিল্পে দিন দিন যেন ধস নামছে। এখানে প্রায় ২ লাখ শ্রমিক সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি শিল্প হওয়া সত্ত্বেও ২০১৭’র পর থেকে ক্রমান্বয়ে অবনতির সম্মুখীন হচ্ছে এই শিল্প। এই অবনতির কারণ পরিবেশদূষণ ও অনুন্নত কর্মপরিবেশ এই দেশীয় চামড়াশিল্পে। অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কাঁচা চামড়ার উপযুক্ত মূল্য না পেয়ে বঞ্চিত হচ্ছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিগত এক দশকের ব্যবধানে চামড়ার জুতা থেকে শুরু করে সব ধরনের চামড়াজাত পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও বিস্ময়করভাবে কাঁচা চামড়ার দাম ক্রমাগত কমছে এবং তা প্রায় অর্ধেকে দাঁড়িয়েছে। ২০১৩ সালে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গরুর কাঁচা চামড়ার প্রতি বর্গফুট দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা। কিন্তু ২০২৪ সালে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরেও ৫০-৫৫ টাকা। কাঁচা চামড়ার জোগানের অর্ধেকের বেশি আসে কোরবানির মৌসুমে। একটা হিসাবে দেশে প্রতি বছর গড়ে বিভিন্ন পশুর ১ কোটি ৭০ লাখ পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এই পরিমাণ কাঁচা চামড়া উৎপাদন করার পরও আমাদের দেশের সরকারের পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব, চামড়া চোরাচালান ও দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট এই সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী শিল্পের অন্যতম প্রধান বাধা। আমরা মনে করি যেভাবেই হোক এই সম্ভাবনাময় শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যা যা করার প্রয়োজন রয়েছে তা সরকারকেই করতে হবে। সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
