দর্শকের মন জয় করতে ব্যর্থ সরকারি অনুদানের সিনেমা

এফএনএস বিনোদন: বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৬ সাল থেকে সরকারি অনুদান প্রথা চালু হলেও আজও এর কার্যকারিতা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলমান। সরকারিভাবে অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা নির্মাণের পেছনে থাকলেও সেগুলোর বাণিজ্যিক সফলতা বা দর্শকপ্রিয়তা চোখে পড়ার মতো নয়। নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক ও সংশ্লিষ্ট সবাই বলছেন, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো কেন ব্যর্থ হচ্ছে তা নিয়ে গভীর প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
সরকারি অনুদান প্রথার সূচনা ঘটে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পকে উৎসাহিত করতে। শুরুতে ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ নামের সিনেমাটি এই উদ্যোগে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও পুরস্কারও পেয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনুদানের সিনেমাগুলো ব্যবসায়িকভাবে সফলতা অর্জন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। গত এক দশকে প্রায় কোনও সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাই প্রেক্ষাগৃহে দর্শক টানতে পারেনি, যার পেছনে রয়েছে নানা কারণ।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের সরকারি অনুদানের তালিকায় ৩২টি সিনেমার জন্য ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ২০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা। গত ৫০ বছরে প্রায় চারশোরও বেশি সিনেমা সরকারি অনুদানে নির্মিত হয়েছে, তবে ব্যবসায়িক সফলতা বা আন্তর্জাতিক পুরস্কারের ক্ষেত্রে খুব কমই সাফল্য দেখা গেছে। এর মধ্যে ‘গাড়িওয়ালা’, ‘মাটির প্রজার দেশে’ এবং ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ সিনেমাগুলো উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক মানদ- অর্জন করেছে।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো যেমন ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’, ‘লাল শাড়ি’, ‘১৯৭১ সেই সব দিন’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘শ্রাবণ জ্যোৎ¯œায়’, ‘ছায়াবৃক্ষ’, ‘মেঘনা কন্যা’ ও ‘আহারে জীবন’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছে তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি এবং ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ‘বলী’ সিনেমাটি যদিও আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রশংসিত হলেও প্রেক্ষাগৃহে সফল হয়নি। আবার ‘দায়মুক্তি’ সিনেমা মুক্তির পর বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে।
এমন ব্যর্থতার পেছনে সংশ্লিষ্টরা নানা কারণ উল্লেখ করেন। তাদের মতে, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর গল্পের দুর্বলতা, প্রযুক্তিগত অভাব, কর্মদক্ষতার ঘাটতি, দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগের অভাব এবং প্রচারণার দুর্বলতা প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুদানের সিনেমাগুলো যদি শুধু শিল্পীকেন্দ্রিক বা উৎসবের উদ্দেশ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সাধারণ দর্শকের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্মিত হয়, প্রচারণা ও প্রদর্শন বাড়ানো হয়, তবে দর্শকের আগ্রহ বাড়ানো সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
এই দীর্ঘ বিতর্কের মাঝেও সরকারি অনুদান প্রথার গুরুত্ব ও প্রয়োজনে কেউ দ্বিমত পোষণ করেন না। তবে বর্তমান সময়ের দর্শক ও বাজারের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পরিকল্পনা ছাড়া এই প্রথার সুফল পাওয়া কঠিন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।