হামাসবিহীন ফিলিস্তিনের শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে জানাল ইসরায়েল

প্রবাহ ডেস্ক : ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট যুদ্ধের পর গাজার প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেমন হবে- সেই পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন, সহিংসতা বন্ধের পর ফিলিস্তিনের এ ভূখ-ের ইসরায়েল বা হামাস কেউ শাসন করবে না। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ শেষ হলে গাজায় হামাসের শাসনক্ষমতা মুছে দেয়া হবে বলে জানিয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, হামাস আর গাজা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবে নির্দিষ্ট কিছু শর্তের বিনিময়ে গাজা উপত্যকার শাসনক্ষমতা পাবে ফিলিস্তিনিরা। তিনি আরো বলেন, অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে ইসরাইল চাইলে পশ্চিম তীরের মতো যে কোনো সময় সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারবে। এ সময় গাজার সীমান্ত অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে থাকবে। এ বিষয়ে চারটি পরিকল্পনার কথা জানান গ্যালান্ট- প্রথমত, পরিকল্পনার অধীনে প্রথমত যুদ্ধ শেষে ইসরাইল গাজার সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক বাহিনী গাজা অঞ্চলের পুনর্গঠনের দায়িত্ব পালন করবে। তৃতীয়ত, এ পরিকল্পনায় মিশর একটি অনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করবে। চতুর্থত, আনুষ্ঠানিকভাবে গাজা অঞ্চলের শাসনক্ষমতা থাকবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। শুধু সামরিক নয় বরং কোনোভাবেই গাজা অঞ্চলের বাসিন্দারা ইসরাইলের জন্য কোনো প্রকার হুমকি যাতে না সৃষ্টি করতে পারে তার দায়িত্ব থাকবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে। এ সময় অঞ্চলটিতে কোনো ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক থাকতে পারবে না বলে জানান তিনি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমন সময়ে এই পরিকল্পনার কথা জানালেন যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যুদ্ধ শুরুর চতুর্থবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে সফরে আসছেন। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে ব্লিঙ্কেনের। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। আকাশ, নৌ এবং স্থলভাবে এসব হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাসের সামরিক স্থাপনা থেকে শুরু করে অস্ত্রাগার এবং অন্যান্য স্থাপনা হামলায় গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জাতিসংঘ এসব তথ্য জানিয়েছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় হামলার পরিমাণ জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। টানা প্রায় তিন মাসের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। এর আগে, গত ডিসেম্বরে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের পর গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ পেতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের প্যালেস্টাইন অথরিটি (পিএ)। এই পরিকল্পনায় উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসও রয়েছে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ। এ বিষয়ে ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ শাতায়েহ জানান, গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের সমন্বয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ শেষে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসকে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) জুনিয়র অংশীদার করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘৭ অক্টোবরের আগের হামাস আর এখনকার হামাস এক নয়। যদি তারা (হামাস) এই প্রস্তাব গ্রহণ করে চুক্তিতে আসতে রাজি থাকে, কেবল তাহলেই তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। আমাদের (পিএলও) অবস্থান থেকে আমরা বলতে পারি, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বিভাজন থাকা উচিত নয়।’ শাতায়েহ আরও বলেন, ইসরায়েল হামাসকে নির্মূল করতে পারবে না। হামাস লেবাননে আছে, সবাই জানে হামাসের নেতৃত্ব কাতারে আছে এবং তারা এখানে (পশ্চিম তীরে) আছে।