আন্তর্জাতিক

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: নিরপেক্ষ থাকতে চায় উপসাগরীয় আরব দেশগুলো

প্রবাহ ডেস্ক : ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে উপসাগরীয় আরব দেশগুলো তেহরানকে তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্পর্কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছে। সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র এই দাবি করেছে। কাতারের রাজধানী দোহায় এ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে এ আলোচনা হয়। মূলত, সংঘাতের আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কায় নিজেদের তেল স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়তে পারে এমন উদ্বেগ থেকেই তারা এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে সূত্র দুটি। গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মন্ত্রীরা ও ইরানের প্রতিনিধিরা একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। যেখানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল উত্তেজনা কমানোর উপায়। ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ইতিহাসের বৃহত্তম হামলা চালানোর পর এই আলোচনা আরও গুরুত্ব পেয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় হামাস ও হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু এবং গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে এই আক্রমণ চালানো হয় বলে জানিয়েছে তেহরান। ইরান জানিয়েছে, তাদের হামলা আপাতত শেষ। তবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আর কোনো প্ররোচনা এলে তারা আবারও আঘাত হানবে। এরইমধ্যে ইসরায়েল কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের তেল স্থাপনাগুলোকে নিশানা করার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। এই সংঘাতকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে এবং উপসাগরীয় দেশগুলো নিজেদের তেল সরবরাহ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য কোনো ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে সচেষ্ট।

সংঘাত নিরসনে উদ্যোগ
একটি সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকের আলোচনায় উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়টি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কাতার, ইরান, সৌদি আরব, কুয়েত ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলো তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। ইরান সরাসরি উপসাগরীয় তেল স্থাপনাগুলোতে হামলার হুমকি না দিলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ইসরায়েলের সমর্থকেরা যদি সংঘাতে সরাসরি জড়ায় তবে তাদের আঞ্চলিক স্বার্থগুলোকে নিশানা করা হবে। সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষক আলি শিহাবি বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো মনে করছে, ইরান তাদের তেল স্থাপনায় হামলা চালাবে না। তবে ইরান পক্ষ থেকে এমন কিছু সংকেত পাওয়া যাচ্ছে যা ইঙ্গিত দিচ্ছে-তাদের এই ক্ষমতাটি রয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টির একটি হাতিয়ার হতে পারে।

উপসাগরীয় দেশগুলোর সতর্কতা
বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের সঙ্গে রাজনৈতিক পুনর্মিলনের চেষ্টা করলেও সম্পর্ক এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি। ২০১৯ সালে ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের আবকাইকের তেল শোধনাগারে হামলার অভিযোগ ছিল। যদিও তেহরান ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ওই হামলাটি বৈশ্বিক তেলের সরবরাহের ৫ শতাংশ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। শিহাবি বলেন, ইরানের প্রতি জিসিসির বার্তা স্পষ্ট-অনুগ্রহ করে উত্তেজনা কমান। সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সৌদি আরব, ওমান, কাতার ও কুয়েত নিয়ে গঠিত জিসিসি।

ইরানের হুঁশিয়ারি
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান দোহায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি ইসরায়েলের যুদ্ধের উসকানির বিরুদ্ধে নীরব থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, যে কোনো সামরিক আক্রমণ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বা আমাদের লাল রেখা অতিক্রম করলে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button