গাজায় জিম্মিদের মুক্তি আলোচনায় উন্নতি হচ্ছে : নেতানিয়াহু
প্রবাহ ডেস্ক : গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের কব্জায় থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তবে আর কতদিন এই আলোচনা চলবে, কিংবা এই অবস্থা থাকবে সে সম্পর্কে যে তিনি অনিশ্চিতÍ তা ও স্বীকার করেছেন।
সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটের অধিবেশনে এমপিদের প্রশ্নের উত্তরে ইসরায়েলের প্রধামন্ত্রী বলেন, “জিম্মিদের মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় উন্নতি হচ্ছে। এ পর্যন্ত আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি কিংবা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিÍ তার সবকিছু আমি এখানে বিস্তারিতভাবে বলতে পারব না। তবে আমি এই পার্লামেন্টে এটুকু বলতে পারি যে আমাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে সব পর্যায়ে যতভাবে প্রচেষ্টা চালানো সম্ভবÍ আমরা তা চালিয়ে যাচ্ছি।”
হামাসের শর্ত ছিল, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলে তবেই জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এই ইস্যুতে অনড় অবস্থানে ছিল হামাস। তবে সম্প্রতি তাদের অবস্থান খানিকটা শিথিল হয়েছে বলে নেসেটে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু।
তিনি বলেন, “মূলত ৩টি বিষয়ের কারণে এটি সম্ভব হয়েছেÍ হামাসের সাবেক রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নিহত হওয়া, ইরান এবং হিজবুল্লাহর কাছ থেকে প্রত্যাশিত সমর্থন না পাওয়া এবং গাজায় চলমান সামরিক অভিযান।”
“তবে আমি খুবই সতর্কতার সঙ্গে বলব যে এই অবস্থা কতদিন থাকবেÍ সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।”
ইসরায়েলের সরকারি একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হামাসের সঙ্গে দুই পর্বের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য চেষ্টা করছে তেল আবিব। প্রথম পর্বে হামাস সব নারী, বয়স্ক এবং আহত জিম্মিদের মুক্তি দেবে এবং দ্বিতীয় পর্বে বাদবাকি অন্যান্যদের মুক্তি দেওয়ার পর যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। নেতানিয়াহু বক্তব্য দেওয়াা আগে সোমবারের নেসেট অধিবেশনে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালের স্মোথরিচ বলেন, তিনি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বদলে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে দেওয়ার বিপক্ষে।
গত শনিবার জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরায়েলজুড়ে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে তেল আবিবে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে। এছাড়া জেরুজালেম, বিরশেবা, কিরিয়াত গাট এবং ওফাকিমেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে অতর্কিত হামলার পর এলাপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাস যোদ্ধারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে বন্দি করে নিয়ে যায় ২৪২ জনকে।
জিম্মিদের মুক্ত করতে এবং হামাসকে ‘শিক্ষা’ দিতে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনও চলছে। ইসরায়েলি সেনাদের গত ১৪ মাসের অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৫ হাজার ৩১৭ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৮ হাজার। নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী এবং শিশু।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও করা হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করার আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।