পাকিস্তানে সামরিক বহরে আত্মঘাতী হামলা: নিহত ৫, আহত ৪০

প্রবাহ ডেস্ক: পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে দেশটির সামরিক বাহিনীর বহরে ভয়াবহ আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলায় তিনজন সেনাসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন এবং আরও ৪০ জন আহত হয়েছেন। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
গত রোববার কোয়েটা-তাফতান মহাসড়কের নোশকি এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা (আইএসপিআর) নিশ্চিত করেছে যে, নিহতদের মধ্যে দুইজন বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ফ্রন্টিয়ার কোরের এই বহরে মোট আটটি যান ছিল, যার মধ্যে ছয়টি বাস এবং দুটি সশস্ত্র যান অন্তর্ভুক্ত ছিল। বহরটি কোয়েটা থেকে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় নোকুন্দি শহরের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে নোশকি শহরের কাছে বহরের একটি বাসের পাশে একটি আত্মঘাতী বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি ধাক্কা দেয়, যার ফলে শক্তিশালী বিস্ফোরণের সৃষ্টি হয়। বিস্ফোরণের ফলে বাসটিতে আগুন ধরে যায় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে বহরের অন্যান্য যানবাহন দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।
বিস্ফোরণের পরপরই আশপাশের পার্বত্য এলাকা থেকে লুকিয়ে থাকা হামলাকারীরা সামরিক বহর লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা জবাব দেয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তীব্র গোলাগুলি চলে। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত এলাকা ঘিরে ফেলে এবং ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করে। অভিযানের সময় আকাশে সামরিক হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যায়।
নোশকি টিচিং হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হামলায় পাঁচজন নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে কোয়েটার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), যারা দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই গোষ্ঠী বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালিয়েছে, যার মধ্যে গত সপ্তাহে কোয়েটা থেকে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ছিনতাই করার ঘটনাও রয়েছে। সে ঘটনায় ২৩ জন সেনা, তিনজন রেলকর্মী ও পাঁচজন যাত্রী নিহত হন।
সাম্প্রতিক হামলার পর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হামলার পরিকল্পনা ও হামলাকারীদের পরিচয় সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে সরকার বিদ্রোহীদের নির্মূল করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে।
বেলুচিস্তান প্রদেশে সাম্প্রতিক সময়ে এমন হামলা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের হামলা পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর প্রতি নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে।