জান্তা-বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় তৃতীয় দফায় যুদ্ধবিরতি বাড়ল মিয়ানমারে

প্রবাহ ডেস্ক: মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত জনজীবন কিছুটা স্বস্তির দিকে এগোচ্ছে সাময়িক যুদ্ধবিরতির সুবাদে। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে ত্রাণ ও পুনর্গঠন কার্যক্রম নির্বিঘœ করতে চলমান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সামরিক সরকার। গত রোববার মিয়ানমারের জান্তা সরকার জানিয়েছে, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু।
গত ২৮ মার্চ মিয়ানমারে আঘাত হানে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী জোড়া ভূমিকম্প। সরকারি হিসাবে, এতে প্রাণ হারান অন্তত ৫ হাজার ৩৫০ জন, আহত হন আরও ৭ হাজার ৬৮০ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন শত শত মানুষ। ভূমিকম্পের পর পরই শুরু হয় ত্রাণ ও পুনরুদ্ধার অভিযান। এই প্রেক্ষাপটেই এপ্রিলের শুরুতে প্রথম দফা সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয় জান্তা সরকার। এরপর মে মাসের শুরুতে দ্বিতীয় দফা এবং সর্বশেষ ৩১ মে শেষ হওয়া মেয়াদের পরে তৃতীয়বারের মতো বাড়ানো হলো যুদ্ধবিরতির সময়সীমা।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল মিয়ানমার ইন্টারন্যাশনাল টিভি জানিয়েছে, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং বিধ্বস্ত অবকাঠামো মেরামতের কাজ এখনও চলমান। এই প্রক্রিয়াকে নির্বিঘœ রাখতে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সরকারি বিবৃতিতে।
প্রসঙ্গত, জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও এই যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। রয়টার্স জানিয়েছে, বিরোধী পক্ষগুলোও যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়িয়েছে।
তবে শান্তিপূর্ণ যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মধ্যেও বহু অঞ্চলে এখনও সংঘাতের খবর মিলছে। বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, জান্তা সরকার কিছু এলাকায় বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। পাল্টা অভিযোগ হিসেবে সেনাবাহিনীও বলেছে, কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে বেসামরিক জনগণের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে জান্তা সরকার।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু চির সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলন। দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত ও মানবিক সংকটের মধ্যেই এবারের ভয়াবহ ভূমিকম্প পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।