আন্তর্জাতিক

গাজায় খাবার সংগ্রহ যেন আরেক যুদ্ধ

প্রবাহ ডেস্ক : হাজারো গাজাবাসীর মতো জীবনবাজি রেখে খাদ্য সংগ্রহ করতে বের হন হিন্দ আল নাওয়াঝা ও তার বোন মাযৌযা। খাদ্যের জন্য কয়েক কিলোমিটার হেঁটে তাদের যেতে হয় নির্ধারিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। তবে এত কষ্টের পরও খাবার পাওয়ার নিশ্চয়তাও যেমন নেই, তেমনি রয়েছে জীবিত ঘরে ফেরা নিয়ে শঙ্কা। উত্তরাঞ্চলীয় গাজার বাসিন্দা নাওয়াঝার বয়স ৩৮। রয়টার্সের প্রতিনিধিকে তিনি বলছিলেন, হয় আপনি খাবার নিয়ে আসবেন আর আপনার সন্তানরা খুশি হবে, নয়তো আপনি খাবার ছাড়া এসে সন্তানদের কান্না দেখবেন। অথবা আপনাকে কাপড়ে মুড়িয়ে ফিরিয়ে আনা হবে (মৃত অবস্থায়)। গাজায় তাদের প্রত্যহ জীবনের বর্ণনা দিয়ে নাওয়াঝা বলেন, এটাই আমাদের জীবন। আমাদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা এই কষ্ট আর সইতে পারছি না। গাজায় বর্তমানে প্রাণহানির পাশাপাশি চলছে খাদ্য সংকট। মাস দুয়েকের ইসরায়েলি অবরোধের পর উপত্যকাটির অধিকাংশ ত্রাণ যাচ্ছে মার্কিন ও ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা গাজা হিউম্যানটারিয়ান ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে। ইসরায়েলি বাহিনীর কড়া প্রহরায় কয়েকটি স্থানে তারা খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। মে মাসের শেষ থেকে জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার নিতে গিয়ে কয়েকশ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করছেন গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, কেবল গত দুদিনেই (১৮ ও ১৯ জুন) জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থার নিয়ে আসা খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। শুধু গতকালই অন্তত ৫১ জন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১২ জন জিএইচএফের নির্ধারিত ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার আনতে গিয়ে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করছেন গাজার স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, গাজার নেতজারিম এলাকায় একদল সন্দেহভাজন লোক তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তাদের গতিবিধি ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বোধ হওয়ার তাদের নিরুৎসাহিত করতে ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়। তবে ওই ঘটনায় কোনও হতাহতের বিষয়ে তারা অবগত নয়। এদিকে, খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারানোর বিষয়ে বক্তব্য জানতে জিএইচএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। ফিরতি মেইলে সংস্থাটি অভিযোগ জানায়, গাজা স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত ভুলভাল তথ্য দিয়ে সবাইকে বিভ্রান্ত করছে। তবে হতাহতের বিষয়ে তারা অবগত কিনা, রয়টার্সের এই প্রশ্নের জবাব জিএইচএফের মেইলে ছিল না। এরমধ্যে জাবালিয়া ও শাতি এলাকায় পৃথক ইসরায়েলি হামলায় অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজা স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসব হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি। লেখাটি শুরু হয়েছিল নাওয়াঝাকে দিয়ে। সেদিন খালি হাতে ফিরে আসতে বাধ্য হন তিনি। কয়েক কিলোমিটার হাঁটা এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরিশ্রমে ক্লান্ত নাওয়াঝা শরণার্থী শিবিরে তার তাঁবুর বাইরেই মাটিতে শুয়ে পড়েন। এখানেই রাস্তার ওপর তিনি ও তার বোন শেষ ২০ দিন ধরে অবস্থান করছেন। তারা জানান, ত্রাণকেন্দ্রে সময়মতো গেলেও অনেক সময় তারা ধাক্কাধাক্কিতে খাবার সংগ্রহ করতে পারেন না। সেখানে খাদ্যের জন্য প্রায়ই ধস্তাধস্তি লেগে যায়। জাতিসংঘ একাধিকবার বলেছে, গাজায় প্রয়োজনের তুলনায় খাদ্য সরবরাহ খুবই অপ্রতুল। সেদিন খাদ্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় অভুক্ত আরেকটা দিন পার করতে বাধ্য হবে নাওয়াঝা ও তার পরিবার। তিনি বলেন, হেঁটে কয়েক কিলোমিটার পার করে কেবল জুতা ক্ষয় আর পায়ে ব্যথাই হয়। এখন খাবার ছাড়া ফিরে এলে দেখতেই পাচ্ছেন, শিশুরা কীভাবে (ক্ষুধায়) কান্নাকাটি করছে। তথ্যসূত্র: রয়টার্স

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button