আন্তর্জাতিক

ইয়েমেনে হুতিদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা, অচল বন্দর-বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রবাহ ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে ইয়েমেনের হুতিদের লক্ষ্য করে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এক মাসের বেশি সময় পর এটাই ইয়েমেনে ইসরায়েলের প্রথম সামরিক অভিযান। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, হুতিদের একের পর এক আক্রমণের জবাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল সোমবার ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর বরাতে এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স ও বিবিসি।
ইসরায়েলি বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনের পশ্চিমাঞ্চলের হুদাইদা প্রদেশের হোসেইন, রাস ইসা ও সালিফ বন্দর এবং রাস কান্তিব বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ হামলা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, এই হামলা ‘অপারেশন ব্যাক ফ্ল্যাগ’-এর অংশ। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, হুতিদের কর্মকা-ের জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। তাঁর ভাষায়, ইয়েমেনের ভাগ্য তেহরানের মতোই হবে, কারণ যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাত তুলবে, সেই হাত কেটে ফেলা হবে।
ইসরায়েলের দাবি, হুতিরা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং লোহিত সাগরে ইসরায়েলের মিত্র দেশগুলোর বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থাকার পর থেকেই ইরান-সমর্থিত হুতিরা গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে এই ধরনের হামলা চালাচ্ছে। এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, ইয়েমেনের রাস ইসা বন্দরে ‘গ্যালাক্সি লিডার’ নামের একটি জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে, যা ২০২৩ সালের শেষ দিকে হুতিরা দখল করেছিল। হুতিরা সেই জাহাজে রাডার ব্যবস্থা স্থাপন করে, যা আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় নৌযান শনাক্তে ব্যবহার করছিল এবং তাদের কথিত ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকা- প্রচারের কাজে লাগাচ্ছিল।
হুতিদের সামরিক মুখপাত্রের দাবি, ইসরায়েলের এই হামলা প্রতিহত করতে তারা স্থানীয়ভাবে তৈরি ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলার কারণে হোদাইদাহ শহরের প্রধান বিদ্যুৎকেন্দ্র অচল হয়ে পড়েছে। পুরো শহর অন্ধকারে ডুবে আছে বলে জানান তারা।
অন্যদিকে হুতিনিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন জানায়, হোদাইদাহ অঞ্চলে একাধিক হামলা হয়েছে। এর আগে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইয়েমেনের তিনটি বন্দর থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়ার জন্য সতর্কবার্তা জারি করেছিল। তবে এ হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি হামলার পর ইয়েমেন থেকেও দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। তবে সে হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকট এবং গাজায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইয়েমেন-ইসরায়েল বিরোধ নতুন মাত্রা নিচ্ছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলা লোহিত সাগর থেকে শুরু করে আঞ্চলিক রাজনীতিতেও নতুন করে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button