আন্তর্জাতিক

যে কারণে ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউসের একাংশ

প্রবাহ ডেস্ক : হোয়াইট হাউসের ঐতিহাসিক ইস্ট উইংয়ের অংশ ভাঙা শুরু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বলরুম তৈরির জন্য অংশটি ভাঙা হচ্ছে। স্থানীয় সময় গত সোমবার থেকে নির্মাণকর্মীরা ভবনের দক্ষিণ দিকের ছাউনিযুক্ত প্রবেশপথ ও জানালার বিশাল অংশ অপসারণের কাজ শুরু করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইস্ট উইং “পুরোপুরি আধুনিকায়ন” করা হচ্ছে। প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত হতে যাওয়া এই বলরুমটি মূল ভবনের কাছেই হবে। ট্রাম্প বলেন, “এটা হোয়াইট হাউসের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে তৈরি হবে। এটি আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা।”ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেন, “মাটির কাজ শুরু হয়েছে” হোয়াইট হাউসের নতুন ও “অত্যন্ত প্রয়োজনীয়” বলরুমের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, “গত ১৫০ বছরে প্রতিটি প্রেসিডেন্টই এমন একটি বলরুমের স্বপ্ন দেখেছেন, যেখানে রাষ্ট্রীয় ভোজসভা ও বড় আকারের অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হবে।” ট্রাম্প জানান, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বেসরকারি অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে, তবে অর্থদাতাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। হোয়াইট হাউসের নির্মাণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম সাধারণত ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (এনপিএস) পরিচালনা করে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের কাছে সংস্কারকাজে বিস্তৃত ক্ষমতা থাকে। এনপিএস–এর সাবেক প্রধান ইতিহাসবিদ রবার্ট কে. সাটন বলেন, “হোয়াইট হাউস নিয়ে যে কোনো পরিবর্তন সবসময়ই বিতর্ক সৃষ্টি করে। এ ভবনটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী ভবনগুলোর একটি, অথচ আমরা জানি না আসলে কী হচ্ছে—এটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।”তার মতে, এমন একটি প্রকল্পে সাধারণত বিস্তৃত পরিকল্পনা, নকশা যাচাই, খরচ পর্যালোচনা ও জনসম্মত প্রক্রিয়া থাকা উচিত, যা এই ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি। হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত নকশায় দেখা গেছে, নতুন বলরুমে শত শত অতিথির আসন ও ঝলমলে সোনালি ঝাড়বাতি থাকবে। প্রকল্পের মূল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ক্লার্ক কনস্ট্রাকশন এবং নকশা করেছে ম্যাকক্রেরি আর্কিটেক্টস। প্রধান স্থপতি জিম ম্যাকক্রেরি বলেন, “জনগণের ঘরকে ঐতিহ্য বজায় রেখেই নতুন সৌন্দর্যে সাজানোর দায়িত্ব পেয়ে আমি গর্বিত।” ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সোসাইটি অব আর্কিটেকচারাল হিস্টোরিয়ানস বলেছে, ১৯৪২ সালের পর এই প্রথম হোয়াইট হাউসের বাইরের কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যা “গভীর পর্যালোচনা ছাড়া করা উচিত নয়।”আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টসও প্রকল্পটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বচ্ছ পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছে। হোয়াইট হাউসে বড় পরিবর্তন অবশ্য নতুন কিছু নয়। বারাক ওবামা টেনিস কোর্টকে রূপান্তর করেন বাস্কেটবল কোর্টে। রিচার্ড নিক্সন প্রেসিডেন্টের ইনডোর সুইমিং পুলকে পরিবর্তন করে তৈরি করেন প্রেস রুম। জেরাল্ড ফোর্ড ১৯৭৫ সালে নতুন আউটডোর পুল নির্মাণ করেন। হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৮–১৯৫২ সালের মধ্যে পুরো হোয়াইট হাউস ভেঙে পুনর্র্নিমাণ করেন। ইতিহাসবিদরা সতর্ক করেছেন, এই বলরুম নির্মাণ যেন কেবল ট্রাম্পের ব্যক্তিগত রুচির প্রতিফলন না হয়। “হোয়াইট হাউস সবসময়ই ‘জনগণের ঘর’ নামে পরিচিত,” বলেন ইতিহাসবিদ সাটন। তিনি বলেন, “এটি যেন ইতিহাসের মর্যাদা রক্ষা করে, কেবল এক প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর হয়ে না থাকে।”

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button