আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে চান জেলেনস্কি

প্রবাহ ডেস্ক : রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির সবচেয়ে সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। নিজের দফতর থেকে প্রকাশিত মন্তব্যে জেলেনস্কি জানান, মিয়ামিতে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র–ইউক্রেন আলোচনায় দুই দেশের প্রতিনিধিদল ২০ দফা কাঠামো পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার আরও কাছাকাছি এসেছে। জেলেনস্কি বলেন, “এটি একটি কাঠামোগত নথি—যুদ্ধ শেষ করার ভিত্তিমূলক দলিল। এটি আমাদের, আমেরিকা, ইউরোপ এবং রাশিয়ার মধ্যে একটি রাজনৈতিক নথি।” তিনি আরও বলেন, “সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা নেতৃপর্যায়ের বৈঠকের জন্য প্রস্তুত। ভূখ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নেতৃপর্যায়ের আলোচনাতেই নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।” ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, তিনি ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ এই যুদ্ধের অবসান চান। তবে এখন পর্যন্ত তিনি যুদ্ধরত পক্ষগুলোর কাছ থেকে বড় কোনও ছাড় আদায় করতে পারেননি। কিয়েভ চাইছে, ওয়াশিংটন যেন একটি খসড়া শান্তি পরিকল্পনা সংশোধন করে। ওই খসড়ায় ইউক্রেনকে আরও ভূখ- ছাড়, ভবিষ্যৎ সামরিক জোটে যোগ না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এবং নিজস্ব সেনাবাহিনীর ওপর সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল—যা মস্কোর প্রধান দাবিগুলোর সঙ্গে মিল রয়েছে। ইউক্রেনের মতে, এতে দেশটি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে প্রতিরক্ষাহীন হয়ে পড়বে। রাশিয়া ২০১৪ সালে প্রথম এবং ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়। জেলেনস্কি বলেন, সর্বশেষ ২০ দফা কাঠামো পরিকল্পনাটি আগের ২৮ দফা প্রস্তাবের তুলনায় বড় ধরনের অগ্রগতি। ওই আগের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইউক্রেন তার বর্তমান ৮ লাখ সদস্যের সেনাবাহিনী বজায় রাখতে পারবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলাদা নথির মাধ্যমে শক্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “আমরা একটি শক্তিশালী ইউক্রেন দেখতে পাব—যাকে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’ সমর্থন করবে, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন তদারকির ব্যবস্থা থাকবে এবং রাশিয়ার সম্ভাব্য নতুন আগ্রাসনের জবাবে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তার স্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকবে।” এ ছাড়া যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি নথি নিয়েও ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করেছে বলে জানান তিনি। তবে অগ্রগতি সত্ত্বেও ভূখ- ইস্যুতে এখনো ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি। জেলেনস্কি বলেন, কিয়েভের প্রস্তাব হলো—বর্তমান যুদ্ধরেখা যেখানে আছে, সেখানেই লড়াই বন্ধ করা। অন্যদিকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া রুশ বাহিনী চায়, ইউক্রেন যেন পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের পুরো এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জেলেনস্কির মতে, ওয়াশিংটন একটি সমঝোতার পথ খুঁজছে এবং ওই এলাকায় একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল বা মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করছে। ইউরোপের সবচেয়ে বড় জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও কোনো সমঝোতা হয়নি বলে জানান তিনি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বর্তমানে রুশ সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায়, সম্মুখসারির কাছেই অবস্থিত। সেখানে একটি ছোট অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেন। জেলেনস্কি বলেন, নতুন ২০ দফা প্রস্তাবটি এখন মস্কো পর্যালোচনা করবে, এরপর পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে। তিনি বলেন, “আমরা বলছি—যদি সব অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয় এবং আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকি, তাহলে চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু যদি আমরা সেখানে থাকতে রাজি না হই, তাহলে দুটি পথ খোলা থাকবে—যুদ্ধ চলতে থাকবে, অথবা সম্ভাব্য সব অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে নতুন করে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button