স্থানীয় সংবাদ

এবার শহরের ময়লাকেও জনগণের কাজে লাগাবে সিটি কর্পোরেশন

# আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনগারের নির্মাণ ব্যয় ৫৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা, বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৯% , বর্জ্য থেকে তৈরী হবে কম্পোস্ট সার, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী, বর্জ্য রূপ নেবে মানব সম্পদে, # কেসিসি মেয়রের হস্তক্ষেপে আমুল পরিবর্তন আসছে বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থায় #

মোঃ আশিকুর রহমান ঃ খুলনাকে আধুনিক নগরী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সর্বত্র চলছে নানামুখি উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। নগরবাসীর দূর্ভোগ কমাতে সড়কের প্রশস্তকরণ, নতুন নতুন সড়ক নির্মান ও মেরামত, জলাবদ্ধতার নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপণার উন্নয়ন, শহরের গুরুত্বপূর্ন মোড়ের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদসহ বিবিধ উন্নয়ণমূলক কাজ চলছে লাগামহীনভাবে। কেসিসি মেয়রের হস্তক্ষেপে খুলনার বর্জ্য ব্যবস্থাপণায় আসছে আমুল পরিবর্তন। খুলনাকে তিলোত্তমা নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে তিনি অত্যন্ত সদয় ও বদ্ধ পরিকর। ওই ধারবাহিকতায় কেসিসি’র উদ্যোগে আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট (এডিপি)’র আর্থিক সহয়তায় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের (সিআরডিপি-২) এর আওতায় কেসিসি ও এলজিইডি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ণ করছে, যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি ৬৭লক্ষ টাকা, বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৯%। প্রকল্পটিতে বর্তমানে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, পাইল কাস্টিং ও পাইল ড্রাইভ’র কাজ চলমান। গেল বছর ২২ ফেব্রুয়ারী সকালে ডুমুরিয়া উপজেলা শলুয়া’র ডাম্পিং পয়েন্টে কেসিসি মেয়র আলহাজ¦ তালুদার আব্দুল খালেক আধুনিক এ বর্জ্য পরিশোধনগার নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, কেসিসি’র উদ্যোগে আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনগার (সিআরডিপি-ঈরঃু জবমরড়হধষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ চৎড়লবপঃ-২) প্রকল্প, যার ধরা হয়েছে ৫৫কোটি ৬৭লক্ষ টাকা, বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৯%। প্রকল্পটিতে বর্তমানে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, পাইল কাস্টিং ও পাইল ড্রাইভ’র কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন কেসিসি’র তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. আব্দুল আজিজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণকৃত বর্জ্য পরিশোধনগারের আওতায় পৃথক পৃথকভাবে কম্পোট সার প্লান্ট, প্লাস্টিক প্লান্ট, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্লান্ট, বায়োগ্যাস প্লান্ট, ওর্য়াকশপ, পাম্প, সাবস্টেশন, লিচেট ট্রিটমেন্ট ফ্যাসালিটি, ল্যান্ডফিল্ড সেল, সীমান প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেন ও পুকুরসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মান করা হবে। বর্জ্য পরিশোধনাগারে থ্রী-আর পদ্ধতিতে বর্জ্য হ্রাস, পুনঃব্যবহার ও পুনঃচক্রায়নের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩৭৫ টন বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। বর্জ্য থেকে প্রতিদিন ১৫ টন কম্পোস্ট সার, বায়োগ্যাস থেকে ৩০০ কডঐ বিদ্যুৎ ও প্লাস্টিক বর্জ্য হতে প্রতিদিন ৫হাজার লিটার ডিজেল তৈরী হবে। এছাড়াও দূষিত পানি বাইরে না ফেলে পরিশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজে ব্যবহার, ওয়েস্ট টু এনার্জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তেরী করে প্লান্টের চাহিদা মেটানো এবং উৎপাদিত সার বাজারজারকরণ (বিক্রয়) এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করাও সম্ভব হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বদলে যাবে খুলনার বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার রুপরেখা। চাকুরিজীবি মোঃ সোহেল রানা জানান, একটি নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা নাগরিক হিসাবে আমাদের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের সচেনতার অভাবে ক্রমশঃই সৌন্দর্য হারাতে বসেছে আমাদের প্রিয় নগরী খুলনা। আমাদের চোখের সামনে ময়লা আর্বজনার নির্ধারিত ডাস্টবিন থাকা সত্ত্বেও গৃহস্থালির আর্বজনাসহ বিবিধ ময়লা আর্বজনা সেখানে যেখানে ফেলি। এতে একদিকে যেমনি পরিবেশ দূষন হচ্ছে অন্যদিকে সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে আমাদের প্রিয় শহরটির। তাই শহরকে বর্জ্য আর্বজনা মুক্ত রাখতে নিজের জায়গা হতে নিজেরই কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহম্মেদ প্রিন্স জানান, সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখা নিয়মিত শহরের ময়লা আর্বজনা পরিস্কার অপসারণ কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে। নির্দিষ্ট স্থান থাকতেও আমরাও যেখানে সেখানে ইচ্ছা-স্বাধীন আর্বজনা ফেলি। যে কারণে ক্রমশঃই আমাদের শহর নোংরা হচ্ছে। একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে এটা কাম্য নয়। আমাদের পরিত্যাক্ত বর্জ্যই মানব সম্পদে রুপান্তিত হবে। ৫৫কোটি ৬৭লক্ষ টাকা ব্যয়ে কেসিসি’র শলয়া ডাম্পিং পয়েন্টে চলমান আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনগারের নির্মান কাজ। চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের পরিত্যক্ত নোংরা বর্জ্য হতেই সার, বিদ্যুৎ ডিজেল উৎপাদন হবে। নির্মানকৃত প্রকল্পটি খুলনা শহরকে আর্বজনা মুক্ত করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম ও সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব শেখ মোহাম্মাদ আলী জানান, খুলনাকে আধুনিক শহর হিসাবে গড়ে তুলতে হলে কেবল সিটি কর্পোরেশনের নিজের উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। নাগরিক হিসাবে আমাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে, যা আমরা পালন করি না। খুলনার গণমানুষের প্রায় প্রিয় নেতা কেসিসি’র মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের হস্তক্ষেপে খুলনায় বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। যার মধ্যে শলুয়ার ডাম্পিং পয়েন্টে বর্জ্য পরিশোধনগারের নির্মান কাজ চলমান। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আমাদের পরিত্যাক্ত বর্জ্য হতে জৈব সার, বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ জ্বালানী উৎপাদন হবে। খুলনাকে আর্বজনা মুক্ত নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে সর্বপ্রথম আমাদেরই আগে সচেতন হতে হবে। কারণ আমরাই শহর নোংরা করছি, সেখানে যেখানে ইচ্ছা-স্বাধীন ময়লা আর্বজনা ফেলছি। সম্মিলিত সচেনতার মাধ্যমেই খুলনাকে আর্বজনা মুক্ত শহর হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব বলে আমি মনে করি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস মাহাবুব ব্রার্দাস সূত্রে জানা গেছে, কেসিসি’র উদ্যোগে ৫৫কোটি ৬৭লক্ষ টাকা ব্যয়ে আধুনিক বর্জ্য পরিশোধনগার (সিআরডিপি-ঈরঃু জবমরড়হধষ উবাবষড়ঢ়সবহঃ চৎড়লবপঃ-২) প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি ৯%। প্রকল্পটিতে বর্তমানে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, পাইল কাস্টিং ও পাইল ড্রাইভ’র কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির নির্মান কাজ শেষ হলে খুলনা বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। প্রকল্পটিতে খুলনা পরিত্যাক্ত বর্জ্য হতে প্রতিদিনই সার, জ¦ালানীসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। বাড়বে রাজস্বও। কেসিসি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. আব্দুল আজিজ জানান, নির্মাণকৃত বর্জ্য পরিশোধনগারের (সিআরডিপি-২) প্রকল্পটির কাজ গেল বছরের ২২ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রকল্পটিতে বর্তমানে ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, পাইল কাস্টিং ও পাইল ড্রাইভ’র কাজ চলমান, কাজের অগ্রগতি ৯%। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে কম্পোস্ট সার প্লান্ট, প্লাস্টিক প্লান্ট, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং প্লান্ট, বায়োগ্যাস প্লান্ট, ওর্য়াকশপ, পাম্প, সাবস্টেশন, লিচেট ট্রিটমেন্ট ফ্যাসালিটি, ল্যান্ডফিল্ড সেল, সীমান প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেন ও পুকুরসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মিত হবে। নির্মানকৃত প্লান্ট হতে প্রতিদিন ৩৭৫ টন বর্জ্য পরিশোধন করে প্রতিদিন ১৫টন কম্পোস্ট সার, বায়োগ্যাস থেকে ৩০০ কডঐ বিদ্যুৎ ও প্লাস্টিক বর্জ্য হতে প্রতিদিন ৫হাজার লিটার ডিজেল তৈরী হবে। এছাড়াও দূষিত পানি বাইরে না ফেলে পরিশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজে ব্যবহার, ওয়েস্ট টু এনার্জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ তেরী করে প্লান্টের চাহিদা মেটানো এবং উৎপাদিত সার বিক্রয়ের এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করাও সম্ভব হবে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সুযোগ্য মেয়র মহোদ্বয়ের হস্তক্ষেপে খুলনার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে গৃহিত প্রকল্পটির মাধ্যমে খুলনা বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button