স্থানীয় সংবাদ

নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দিন

# খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা #
# ২৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা হবে : কাদের #

স্টাফ রিপোর্টার ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছি। ধারাবাহিক গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে। আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে মংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও চালু করে। তিনি আরও বলেন, আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াতের কাজই আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। আগুন দিতে আসলে আপনারাই ওই হাত আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের উন্নয়ন হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকা-। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। মানুষ খুন তাদের একমাত্র গুণ। বিএনপি-জামায়াতের আর কোনো গুণ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন এই ২৮ অক্টোবর কীভাবে পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বেহুঁশ হয়ে গেছে তাও ছাড়েনি। তারপর কুপিয়েছে। ৪৫ জন পুলিশ আহত হয়েছে। সাংবাদিকদেরও ছাড়েনি। সাংবাদিকদের তারা পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ স্টেশনে ঢুকে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স ভেঙেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বার বার সরকার গঠন করেছি, আমারতো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি মানুষের ভাগ্য বদল করতে চাই। বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। আপনারাই বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দিবেন। জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা হবে : কাদের
কোয়াটার ফাইনাল হয়েছে, সেমিফাইনাল চলছে। আগামী জানুয়ারি মাসে ফাইনাল খেলা হবে। আমরা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ, আমরাই বিজয়ী হবো। বিকেলে খুলনা আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি শেষ হওয়ার পথে। বেশি তর্জন গর্জন করতে গিয়ে নিজেদের পতন ডেকে এনেছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সফল অপশক্তি ভেঙ্গে চুরে তছনছ হয়ে যাবে। আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ করতে হবে। কাউকে ছাড়া হবে না। খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক। এর আগে সমাবেশে সোমবার দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হেলিকপ্টারে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুলনার ২৯ প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন ঃ খুলনার ২৪ প্রকল্প ও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে মহাসমাবেশ মঞ্চ থেকে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলো তুলে ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রকল্পগুলো হচ্ছে- গণপূর্ত বিভাগের রয়েছে ৮টি। সেগুলো হলো- নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডে ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ভবন নির্মাণ কাজ, শামসুর রহমান রোডে সিভিল সার্জনের অফিস ভবন ও বাসভবন। খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন কাজ। খুলনা শিক্ষানবিশি প্রশিক্ষণ দপ্তর সংস্কার ও আধুনিকায়ন কাজ। খুলনায় বিএসটিআই’র ১০তলা আঞ্চলিক অফিস স্থাপন ভবন। বিটাক, খুলনা কেন্দ্রে ১০তলা বিশিষ্ট নারী হোস্টেল ভবন নির্মাণ। পাইকগাছা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ (সিভিল, স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক) কাজ। নগরীর দৌলতপুরে কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ৪তলা ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ কাজ।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন (ইকোট্যুরিজম) সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প রয়েছে ১১টি। প্রকল্পগুলো হলো- ডুমুরিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫তলা অ্যাকাডেমিক কাম ৪তলা প্রশাসনিক ও ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণ কাজ। বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খুলনা কলেজিয়েট স্কুল, সরকারি এল বি কে ডিগ্রি মহিলা কলেজ, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, চালনা বাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তালিমুল মিল্লাত রহমাতিয়া ফাজিল মাদরাসা, নজরুলনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, আরআরএফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে ৬তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, আগড়ঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ এবং পাইকগাছা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের ৫-তলা একাডেমিক কাম ওয়ার্কসপ ও ৪-তলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকল্প হলো- ডুমুরিয়া উপজেলার চরচরিয়া শিবনগর সড়কে ভদ্রা নদীর ওপর ৩১৫ দশমিক ৩০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ কাজ ।
উদ্বোধন করা হয়েছে- খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্প এবং খুলনা শহরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খালিশপুর বিআইডিসি রোডে ড্রেন, ফুটপাত নির্মাণসহ রাস্তা প্রশস্তকরণ ও পুনর্র্নিমাণ কাজ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ডুমুরিয়া উপজেলাধীন বসুন্দিয়াডাঙ্গা বাজার-মাগুরখালী ইউপি অফিস (চরচরিয়া শিবনগর সড়ক) সড়কে ২৪৯০ মিঃ চেইনেজে ভরা নদীর উপর ৩১৫.৩০ মিঃ লম্বা পিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ কাজ’। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে- নগরীর দৌলতপুরে অতিরিক্ত পরিচালকের ৬তলা বিশিষ্ট নবনির্মিত অফিস ভবন। এছাড়া ৫টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তরগুলো হচ্ছে- খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় স্যানিটারী ল্যান্ড ফিল নির্মাণ, মাথাভাঙ্গা। উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এর ৫ তলা একাডেমিক কাম ৪-তলা প্রশাসনিক ও ওয়ার্কসপ ভবন নির্মাণ কাজ। “পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পাইকগাছা উপজেলাধীন জিসি-লস্কর বাজার-বইনতলা বাজার- বগুলারচর বাজার-শুড়িখালী বাজার-ভা-ারপোল বাজার-গীলাবাড়ি জিসি সড়কে ২৩০০ মিটার চেইনেজে কুরুলিয়া নদীর উপর ৭৪৮.৯০ মিটার ব্রীজ নির্মাণ কাজ। পাইকগাছার “আকলিমা খাতুন টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন’ প্রকল্প এবং সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ বসন্তপুর নদী বন্দর। এর আগে সোমবার বিকাল ৩ টা ১৬ মিনিটে তিনি সমাবেশমঞ্চে আসেন। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে হেলিকপ্টারে খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন তিনি। তিনি একটু পরে সাকিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়। এর আগে পৌনে ১১টায় মঞ্চের প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতে সাংস্কৃতিক সংগঠন রূপান্তরের শিল্পীরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে উপজীব্য করে একক ও সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনা করেন। এরপর কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তৃতা শুরু করেন। এ সময় ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল এমপি। বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, পানি-সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এনামুল হক শামীম, জলবায়ু উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, মৎস্য প্রতিমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রহুল হক, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্না, পারভীন জামান কল্পনা, নির্মল কমার চ্যাটার্জিসহ আরও অনেকে। এসময় মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল, নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ আরও অনেকে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button