বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে
খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
২৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র হবে খুলনা, বিএনপি ইসরাইলের ইয়াহুদিদের মত হাসপাতাল ও এ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিচ্ছে, জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা হবে বললেন কাদের
স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার সার্কিট হাউজের বিভাগীয় সমাবেশে বলেছেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বেশি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র হবে খুলনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার একটাই লক্ষ্য এদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছি। ধারাবাহিক গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে। আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে তাদের ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, মানুষ খুন, বিএনপি-জামায়াতের একমাত্র গুণ। এ ছাড়া তাদের আর কোন গুণ নেই। এ কারণে তারা ক্ষমতায় আসতে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে। তাদের প্রতিহত করতে ইতিমধ্যেই অগ্নিসংযোগকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এদের কোন ক্ষমা করা হবে না বলেও উল্লেখ করেন। তিনি সোমবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ভাষণ শুরু করে ৪টা ৪৮ মিনিটে শেষ করেন। ৩৮ মিনিটের বক্তব্যে বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি ইসরাইলের ইয়াহুদীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারাও ইয়াহুদীদের মত হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিচ্ছে। প্রসূতি মাতা এ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে যাচ্ছিল সেই এ্যাম্বুলেন্সে বিএনপি’র অবরোধকারীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে ছাড়েনি। তাদের চরিত্র কখনো বদলাবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এমনকি তিনি বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও ওয়াদা ভঙ্গকারী বলেও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন হচ্ছে। পদ্মা সেতুর সুফল দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বেশি পাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের পরবর্তী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র হবে খুলনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার খুলনার অনেক উন্নয়ন করেছে। ইতিমধ্যেই আরো ২৯ টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে উন্নয়ন আরো তরান্বিত হবে। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশে দারিদ্রতা কমেছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, সাক্ষরতার হার বেড়েছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষের পুষ্টির ঘাটতি নেই। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি, উপবৃত্তি ও গবেষণার জন্য টাকা দেয়া হচ্ছে। আইসিটি সহ বিভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত করে শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। ভূমিহীন এবং গৃহহীন মানুষদের জমি ও ঘর দেয়া হচ্ছে। একটি মানুষও ভূমিহীন এবং গৃহহীন থাকবে না। আশ্রয়ন প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম এবং বীর নিবাস এর মাধ্যমে ঘর প্রদান করা হচ্ছে। একটি মানুষও যেন ঠিকানা বিহীন না থাকে সেজন্য সরকার এসব প্রকল্প হাতে নিয়েছে। স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক করা হয়েছে। এছাড়াও বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে। জাতীয় বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রেলওয়ে ও বিমানের উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের উন্নয়ন হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি মানে সন্ত্রাসী কর্মকা-। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হচ্ছে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা দেখেছেন এই ২৮ অক্টোবর কীভাবে পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। বেহুঁশ হয়ে গেছে তাও ছাড়েনি। তারপর কুপিয়েছে। ৪৫ জন পুলিশ আহত হয়েছে। সাংবাদিকদেরও ছাড়েনি। সাংবাদিকদের তারা পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ স্টেশনে ঢুকে হাসপাতালে আক্রমণ করেছে। কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স ভেঙ্গেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য এ দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করা। ২০০৮ সাল ২০১৪, ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসেছি। ধারাবাহিক গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্র আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে মোংলা বন্দর বন্ধ করে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আবারও চালু করে। তিনি আরও বলেন, আগুন দিয়ে যারা মানুষ মারে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। বিএনপি-জামায়াতের কাজই আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা। আগুন দিতে আসলে আপনারাই ওই হাত আগুনে পুড়িয়ে দেবেন। তিনি আরও বলেন, বার বার সরকার গঠন করেছি, আমারতো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি মানুষের ভাগ্য বদল করতে চাই। বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। আপনারাই বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, উন্নয়ন দিয়েছে, ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আরেকবার সেবা করার সুযোগ দিবেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা : ওবায়দুল কাদের : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খেলা হবে রূপসা নদীতে, সুন্দরবনে খেলা হবে, খেলা হবে সারা বাংলায়। কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা শেষ হয়ে গেছে, এখন সেমিফাইনাল। সবাই প্রস্তুত সেমিফাইনাল এর জন্য। আর জানুয়ারিতে হবে ফাইনাল খেলা। সোমবার বিকেল চারটায় খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, দেখেন নাই ২৮ তারিখে নয়া পল্টনের মঞ্চ থেকে মীর্জা ফখরুল পালাইছে। আরাফী নাকি তাদের ক্ষমতায় বসাবে। আল্লাহ যদি কাউকে ক্ষমতায় রাখে তাকে মানুষের পক্ষে সরানো সম্ভব না। শেখ হাসিনার সাথে জনগণ আছে, তাকে হটানো যাবে না। সরকার হঠানোর চক্রান্ত সফল হয়নি। তিনি বলেন, সরকার শেষ হয়নি, শেষ হয়ে গেছে তারা। বিএনপি শেষ হওয়ার পথে তারা তর্জন গর্জন করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা আছেন, জনগণের সাথে আছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাহস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াবেন। আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ করবেন। কোনভাবেই তাদের ক্ষমা করা হবে না। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আরও বক্তৃতা করেন শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, সেখ সালাহউদ্দিন এমপি, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, আব্দুর রহমান, শাহজাহান খান এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি, চীফ হুইপ লিটন চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, মাহাবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ প্রমুখ। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি, সালাম মুর্শেদী এমপি, আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বিএম জাফর, খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রনজিত কুমার ঘোষ, খুলনা মহানগর যুবলীগের সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ, জেলা যুবলীগ সভাপতি চৌধুরী রায়হান ফরিদ, জেলা স্বেচ্ছা সেবক লীগের সভাপতি শেখ মোঃ আবু হানিফ, জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, মহানগর ছাত্র লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাসেল প্রমুখ। যৌথভাবে সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা। সহযোগীতায় ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সাইফুল ইসলাম। এর আগে সকাল থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে সার্কিট হাউজ মাঠে আসেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ফেরি, বাস, ট্রেন, ট্রাকে করে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জনসভাস্থলে আসেন তারা। অনেকে আবার নেতাদের দেওয়া টিশার্ট কিংবা শাড়ি পরে আসেন জনসভায়। এছাড়াও নেতাকর্মিদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, নৌকা প্রতিকের প্লাকার্ড। বিকেল নাগাদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে সার্কিট হাউজ মাঠ এবং আশপাশের এলাকায়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩ মার্চ খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দানের জনসভায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।