স্থানীয় সংবাদ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন, খুলনা-১ : আওয়ামী লীগের ৭ , বিএনপি’র ১

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান ঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-১ আসনে (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এবার সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ৭ জন। অপরদিকে, নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান আন্দোলনে থাকা বিএনপি’র প্রার্থী একক। এর বাইরেও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সিপিবি’র প্রার্থীদেরও নাম শোনা যাচ্ছে। তফসীল ঘোষণার আগে থেকেই এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচারে থাকলেও মাঠে নেই অন্য দলের প্রার্থীরা। হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত খুলনা-১ আসনটি আওয়ামী লীগের রিজার্ভ আসন হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৮ সালে এরশাদের নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া বাকি নির্বাচনে এই আসনের ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কখনো নিরাশ করেনি। জানা গেছে, খুলনা শহরসংলগ্ন বটিয়াঘাটা এবং সুন্দরবনঘেঁষা দাকোপ-এই দুই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও চালনা পৌরসভা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসন। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন ও নোনাপানির সঙ্গে বসবাস করা মানুষের আক্ষেপেরও শেষ নেই। খুলনা-১ জাতীয় সংসদের ৯৯ নম্বর আসন। বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) হুইপ পঞ্চানন বিশ্বাস। এর আগে ১৯৯১ সালে এই আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুনুর রশিদ। এরপর ১৯৯৬ সালে প্রথমবার এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। তবে সেবার দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসেবে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন পঞ্চানন বিশ্বাস। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন শেখ হারুনুর রশিদ।
এরপরে ২০০১ সালে এবং ২০১৪ সালে পঞ্চানন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে আবার এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে পঞ্চানন বিশ্বাস ৬৬ হাজার ৯০৪ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী ২০০৮ এ নির্বাচিত এমপি ননীগোপাল ম-ল। তিনি পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৫২৭ ভোট। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ননীগোপাল ম-ল পেয়েছিলেন ১ লাখ ২০ হাজার ৮০১ ভোট। তখন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী আমীর এজাজ খানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬৮ হাজার ৪০২।
সবশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-১ আসনের ১০৭টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের পঞ্চানন বিশ্বাস ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৯ ভোট পেয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আমীর এজাজ খান পেয়েছিলেন ২৮ হাজার ৪৩৭ ভোট। নির্বাচনের ময়দানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন, জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায়, সিপিবির অশোক কুমার সরকার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আবু সাঈদ।
স্বাধীনতার পর আসনটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের এম এ খায়ের, ১৯৭৯ সালে বিএনপির সৈয়দ মোজাহিদুর রহমান, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের শেখ হারুনুর রশিদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির শেখ আবুল হোসেন বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে এমপি হয়েছিলে বিএনপির প্রফুল্ল কুমার ম-ল।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে পঞ্চানন বিশ্বাস ছাড়াও আরও ছয়জন দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। এরা হলেন-সাবেক এমপি ননীগোপাল মন্ডল, বর্তমান স্থানীয় সংরক্ষিত আসনের নারী এমপি অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, বিসিবি’র পরিচালক ও বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সোহেল, দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন, বটিয়াঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান এবং জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল।
অপরদিকে, এ আসনে এককপ্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে আছে বিএনপি। ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে পরাজিত হলেও লেগে থেকে এ আসনে বরাবরই নির্বাচন করেন খুলনা জেলা শাখার বর্তমান আহ্বায়ক আমির এজাজ খান। এ ছাড়া বর্তমান সংসদের বিরোধী দল এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রার্থীর প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। ২০১৮ সালেও তিনি নির্বাচন করেছিলেন। আর সিপিবি’র জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ও বটিয়াঘাটা উপজেলার সভাপতি অশোক কুমার সরকার এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আবু সাঈদ গতবারের মতোই প্রার্থী হচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, একজন এমপি হিসেবে যতটুকু করা যেতে পারে, তিনি ততটুকইু করার চেষ্টা করেছেন। তাই তিনি যেমন মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী, তেমনি এলাকাবাসীও তাকে নির্বাচিত করবেন বলে যথেষ্ট আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ননীগোপাল ম-ল জানান, আমি আশা করি দল এবার আমাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেবে। কেননা ২০০৮ সালে আমি এমপি হওয়ার পর অবহেলিত এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছি। আগামীতে নির্বাচিত হলে দাকোপ-বটিয়াঘাটায় কৃষি ও যোগাযোগে বিপ্লব ঘটাতে চান তিনি। অপরদিকে বিএনপি’র আমির এজাজ খান বলেন, দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি নির্বাচনে অংশ নেব। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আমি জয়লাভ করব।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button