ডুমুরিয়ার এক প্রতারক এখন শ্রীঘরে

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ পেয়েছে অনেক তথ্য
ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ নিজেকে কখনো সেনা কর্মকর্তা, কখনো সরকারি বড় অফিসার আবার কখনো গোয়েন্দা প্রশাসনের লোক বলে চলতেন মোঃ রাসেল শেখ (২৭)। কিন্তু প্রকৃত পক্ষ্যে তিনি হলেন একজন ভয়ংকর প্রতারক। মুলতঃ এভাবে মিথ্যা পরিচয় ব্যবহার করে মোটা অংকের টাকা ও মহিলাদের সঙ্গে শারিরিক সম্পর্ক গড়ে তোলাই ছিল তার প্রধান কাজ। তবে এবার আর তার শেষ রক্ষা হয়নি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় তিনি ধরা পড়েছেন পুলিশের জালে।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাহস কুমারঘাটা এলাকার মোঃ সাখাম শেখের ছেলে মোঃ রাসেল শেখ। ভুয়া পরিচয়ে চলাফেরা ছিল তার। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিল অবাধ বিচরণ। কোথাও সেনা কর্মকর্তা, কোথাও সরকারি বড় অফিসার আবার কোথাও গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। শারিরিক গঠন ও পোশাক-পরিচ্ছেদও থাকতো সেই আঙ্গিকে। এছাড়া তিনি রাতও কাটাতেন দামি দামি হোটেল-রেস্টুরেন্টে। ফলে খুব সহজে তার প্রতারণার ফাঁদে পড়তো অনেকে। তবে তার এই প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ছিল ইন্টারনেট ও ফেসবুক আইডি। এ জগতে তিনি অত্যন্ত পারদর্শী। ফলে একাধিক ফেসবুক আইডি ছিল তার। যা ছিল ভুয়া। আর ওই ভুয়া আইডি’র মাধ্যমে যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন তিনি। টার্গেট করতেন সুন্দরী মহিলাদের। দিতেন চাকরির প্রলোভন বা চাকরিতে বদলী করানোর লোভ। আবার কারো কারো নিকট সাজতেন বিয়ের পাত্র। কৌতুহলী হয়ে অনেকে চাইতেন সারাসরি সাক্ষাত করতে। আর তাতেই প্রতারক রাসেল ফেলতেন ফাঁদ। দামি হোটেল বা রেস্টুরেন্টে হত দেখা। পরণে দামী পোশাক, হাতে দামী ফোন আংটি দেখে অবিশ্বাসের কোন সুযোগ থাকতো না তাদের। এরপর যত শীঘ্রই তার নিকট থেকে টাকা নিয়ে উদাও হতেন রাসেল। প্রতারণার এই পেশাটা তিনি চালিয়ে আসছেন বছর দেড়েক ধরে। যার মধ্যে দিয়ে তিনি টাকা রোজগার ছাড়াও অনেক মহিলার সঙ্গে শারিরিক সম্পর্কও লিপ্ত হয়েছেন। সম্পর্কের জেরে টাকাও আয় হয়েছে তার। সব মিলিয়ে রাজকীয় জীবন যাপন ছিল তার। কিন্তু তার ওই ভুয়া পরিচয় বেশি দিন টেকেনি। বাগেরহাটের এক যুবতীর সঙ্গে প্রেমজ সম্পর্ক ও বিয়ের জেরে তার আসল চেহারা বেরিয়ে এসেছে। ঘটনার সুত্রে জানা গেছে, রাসেল শেখের সাথে ফেসবুকে পরিচয় ঘটেছিল তার। তবে আইডিতে ছিলেন জিসান আহমেদ। পেশায় ছিলেন সেনা বাহিনীর ডিজিএফআই’র কর্মকর্তা। পরিবারের চাপে অতি দ্রুত বিয়ে করা দরকার। লোভনীয় ওই কথায় ঝুঁকে পড়েন ওই যুবতী। সাক্ষাতের জন্য মিলিত হন খুলনার দামী হোটেলে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সম্পন্ন হয় তাদের বিবাহ। এরপর চাকরিতে পদন্নোতির জন্য দরকার ৫ লক্ষ টাকা। স্বামী’র প্রমোশন শোনা মাত্রই তুলে দেন সাড়ে ৩লাখ টাকা। কিন্তু আরও টাকার জন্য চাপ দেন রাসেল। এক পর্যায়ে সন্দেহ হয় স্ত্রীর। তারপর খোজ খবর নিয়ে জানতে পারেন জিসানের প্রকৃত নাম হল রাসেল শেখ। আর তিনি কোন চাকরি করেন না। মুলতঃ ভবঘুরে ও প্রতারণায় হল তার আসল পেশা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই যুবতী ডুমুরিয়া ানায় একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগের সুত্র ধরেই তদন্তে নামে থানা পুলিশ। ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ফলে বেরিয়ে আসে প্রতারক রাসেলের ফেসবুক জগতের অনেক তথ্য। এ বিষয়ে ডুমুরিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেখ কনি মিয়া বিপিএম জানান, প্রতারক রাসেল শেখের বিষয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক তথ্য আমরা হাতে পেয়েছি। এবং সে নিজেও অনেক কিছু স্বীকার করেছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, আটক রাসেল শেখ একজন ভয়ংকর প্রতারক। ফেসবুকে ভুয়া আইডি’র দ্বারা সে অনেক মহিলার সর্বনাশ ও অবৈধ ভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে এবং থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।