খুলনার বিভিন্ন স্থানে জমজমাট জুয়ার আসর

এ্যাপভিত্তিক অনলাইন জুয়া’য় বিদেশে পাচার হচ্ছে টাকা
স্টাফ রিপোর্টারঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশানুযায়ী ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর বন্ধ রয়েছে খুলনার ক্লাব পাড়াসহ বেশিরভাগ ক্লাবের জুয়ার আসর। তবে খুলনার কয়েকটি জায়গায় কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না পারিবারিক কলহ সৃষ্টিকারী জুয়া। শুধু সশরীরে নয়, তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জুয়া চলছে এখন স্মার্ট ফোনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জুয়াড়ীদের অংশগ্রহণে জমজমাট অনলাইন জুয়ার আসর। বিদেশী জুয়া এ্যাপের মাধ্যমে কৌশলে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বহির্দেশে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে এসকল জুয়াড়ীদেরকে বারংবার আটক করা হলেও, আইনের ফাঁকফোকড়ে বেরিয়ে পড়ছে তারা। জুয়ার নুন্যতম আইনের সহজ শেকল পেরিয়ে পুনরায় জুয়ার বোর্ড পরিচালনা করছে এ সকল জুয়া সম্রাটেরা।
জুয়ার এই আসর শক্ত করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে বিভিন্ন সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গাচ্ছে এসকল জুয়াড়ীরা। জানা যায় , কয়েকজন জুয়া মামলায় আটক হলেও সে একটি মহলকে ম্যানেজ করে পুনরায় জুয়া চালায় । এছাড়া খুলনা পাইওনিয়র স্কুলের বিপরীতে একটি দ্বিতল ভবনে ও কয়লাঘাটের একটি বাড়ীতে চলে রমরমা জুয়ার আসর। তবে কে এম পি’র গোয়েন্দা ও খুলনা থানা পুলিশের পৃথক অভিযানে প- হয় এই আসর। জনৈক ফিরোজ নগরীর ৩/৪ টি স্থানে জুয়া চালায়। প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব জুয়ার আসর থেকে মোটা অংকের টাকা নেন তিনি। নতুন রাস্তা সংলগ্ন কাশিপুরে একটি বোর্ড চলে। শান্তিধাম মোড়ে জুয়ার আসর চলে। এছাড়া রুপসা মাছবাজার, রেলওয়ে ষ্টেশন, লঞ্চ ঘাটেও ছোট-বড় কয়েকটি জুয়ার আসর চলমান। গনযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বেশ কিছু অনলাইন পোর্টালে লোভনীয় অফারের মাধ্যমে আকৃষ্ট করছে এসকল অনলাইন জুয়াড়ীদের। ক্রিকেট খেলার মাঝে বিজ্ঞাপন আকারে এসব অফার দেওয়া হয়। ওয়ান এক্স বেট, বেট টুয়েন্টি ফোর, সেভেন এক্স বেট সহ নানা নামে এসকল অনলাইন জুয়ায় প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। খুলনার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ক্লাবসহ নানা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়িত চলছে এই অনলাইন জুয়া। এছাড়া কিশোর, যুবক মধ্যবয়সী নারী ও পুরুষের অন্যতম আকর্ষন এখন এ্যাপভিত্তিক অনলাইন জুয়ায়। একটি বিদেশী এ্যাপের মাধ্যমে আট থেকে নয়গুন পর্যন্ত লাভের আশা দেখিয়ে টাকা নেয় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্টরা। স্পিনিংসহ নানা পদ্ধতির জুয়ার লোভে একটি নির্দিষ্ট একাউন্টে টাকা বিনিয়োগ করে এসকল জুয়াড়ীগন। লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয় বিকাশ, নগদ, রকেটসহ নানা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া কিছু কিছু অনলাইন জুয়ায় ব্যবহার করা হয় অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সি কিংবা বিট কয়েন। খুলনার লোকাল জুয়ার এজেন্টগণ যোগাযোগ রাখে মাস্টার এজেন্টদের সাথে। প্রান্তিক পর্যায়ের জুয়াড়িদের নিকট থেকে গৃহীত এসব টাকা বিট কয়েন কিংবা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে পৌছে যায় বিদেশী গ্রান্ড এজেন্টদের কাছে। আইনের জালে এসকল অনলাইন জুয়াড়ীরা আটক হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে এজেন্ট ও মাস্টার এজেন্টগন। এসকল জুয়াড়িদের মধ্যে কিছু অংশ রয়েছে শিক্ষার্থী। লাভের আশায় বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পেতে পুনরায় জুয়ায় বিনিয়োগ করছে টাকা। পরিবারের সমর্থন না পাওয়ায় এসকল শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে নানা কু কর্মে। এ বিষয়ে নাদিরা বেগম নামক একজন অভিভাবক বলেন, “স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন থাকায়, সহজেই এসকল জুয়ার এপলিকেশনে বেট লাগিয়ে যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সাথে সাথে প্রশাসনেরও পদক্ষেপ জরুরী।” এছাড়া এই জুয়া পারিবারিক অশান্তির অন্যতম কারন বলে মনে করেন ফাতেমা খানম নামক এক স্কুল শিক্ষিকা। তিনি বলেন “একজন জুয়াড়ি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে। জুয়ার বোর্ডে টাকা নষ্ট করতে কোনোভাবে দ্বিধাবোধ করে না। ফলে, আর্থিক সমস্যা হয় ও সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়।” এই বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার উপ কমিশনার বি এম নুরুজ্জামান বলেন, ইতিমধ্যে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কয়েকটি জুয়াড়িকে আটক করা হয়েছে। আমাদের জুয়াবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। সম্প্রতি খুলনায় নতুন পুলিশ কমিশনারের যোগদানের পর নড়েচড়ে বসেছে সকল জুয়াসম্রাট ও এজেন্টগন। লাগাতার জুয়াবিরোধী অভিযানে বেশ কয়েকজন জুয়াড়্ীেদরকে আটক করায় বেশ কয়েকটি জুয়ার পয়েন্ট আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে অদৃশ্য শক্তির বলে কয়েকটি আসর এখনো জমজমাট।