স্থানীয় সংবাদ

খুলনা বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তরে স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে অবহিতকরণ সভায় কেএমপি’র কমিশনার

ভেটেরিনারিসহ উন্নত বাংলাদেশে লাইভস্টক সেক্টর একটি স্মার্ট লাইভস্টক সেক্টরে পরিণত হবে বলে আমার দৃঢ বিশ্বাস

স্টাফ রিপোর্টার ঃ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে ভেটেরিনারিসহ লাইভস্টকদের পদোন্নতি বৈষম্য সমাধান করে বিভিন্ন গ্রেডে পদোন্নতি দিয়েছেন, আর বর্তমানে কৃষি, মৎস, দুগ্ধ, পোল্ট্রি শিল্পে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তা অকল্পনীয়। ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খুলনা বয়রাস্থ নুরনগর বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তর খুলনায় স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে ‘আইনগত দক্ষতা ও পেশাগত নৈতিকতা এবং অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি একথা বলেন। এসময় কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার সভায় উপস্থিত অতিথিদের শুভেচ্ছা ও সালাম জানিয়ে ভেটেরিনারি সম্পর্কিত মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যের শুরুতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি ইতিহাসের মহানয়ক ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান স্থপতি বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতার শত্রু কতিপয় ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সাথে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ সকল পুলিশ সদস্যসহ ত্রিশ লক্ষ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো দুই লক্ষ মা-বোনের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি এসময় আরো বলেন, “১৮৬২ সালে ভারতবর্ষের পুনে’তে সর্বপ্রথম সামরিক ভেটেরিনারি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়, যেখানে ১ বছর মেয়াদী ভেটেরিনারি কোর্স প্রদান করা হতো। ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদ চালুর মাধ্যমে এ শিক্ষার সূচনা হয়। ইতোমধ্যে এই সেক্টরের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ভেটেরিনারি শিক্ষা চালু হয়েছে। বর্তমানে ১টি পূর্ণাঙ্গ ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২টি কলেজে ভেটেরিনারি শিক্ষা লাভ করা যায়। সর্বমোট ১৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে ভেটেরিনারি শিক্ষা দেওয়া হয় এবং এর প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই এত প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা প্রদান করা হয়। ভেটেরিনারিরা পৃথিবীর সকল দেশে ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীতে গবেষণায় সফল ব্যক্তিরা তার গবেষণার অধিকাংশই প্রাথমিকভাবে প্রাণীদেহের উপর প্রয়োগ করেছে। মানব দেহ সংক্রান্ত যত এন্টিবায়োটিক বা ভ্যাকসিন তার অধিকাংশই প্রাণীদেহের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ দখল করে আছে প্রাণিসম্পদ। কিন্তু প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে দেশে পর্যাপ্ত ভেটেরিনারি ডাক্তারের অভাব। দেশে নিবন্ধনকৃত ভেটেরিনারিয়ানের সংখ্যা মাত্র সাত হাজার পেরিয়েছে। অবশ্য এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভেটেরিনারি শিক্ষার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। মানব সভ্যতা ইতিহাসের উষালগ্ন থেকেই মানুষ যখন বন-জঙ্গলে, গুহায় বসবাস করত তখন থেকেই প্রাণীর সাথে মানুষের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। তাই মানুষের যত রোগ-ব্যাধি হয় তার একটা বড় অংশই প্রাণীকুল থেকে আসে। ১৯৭৩ সালে ১৩ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু প্রথম বারের মতো কৃষিবিদদের সম্মানিত করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দেশটি এগিয়ে নিতে হলে কৃষি ক্ষেত্রে বিপ্লবের মাধ্যমে খাদ্য এবং পুষ্টির চাহিদা-যোগানের সমন্বয় প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে। প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে ভেটেরিনারিসহ লাইভস্টকদের পদোন্নতি বৈষম্য সমাধান করে বিভিন্ন গ্রেডে পদোন্নতি দিয়েছেন। বর্তমানে কৃষি, মৎস, দুগ্ধ, পোল্ট্রি শিল্পে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে তা অকল্পনীয়। ২০১০ সালে যে মাংস উৎপাদন ছিল বর্তমানে তার চার গুণ বেশি মাংস উৎপাদিত হয়। এ ক্ষেত্রে ভেটেরিনারিদের অবদানও অনস্বীকার্য। ২০১৯ সালে সরকার কর্তৃক ভেটেরিনারি কাউন্সিলের কর্মক্ষেত্রে যে আইন প্রণয়ন হয়েছে তা কার্যকরী। এই আইনটি সম্পর্কে মৎস, দুগ্ধ, পোল্ট্রি শিল্প, পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের সবার জানা দরকার। এই আইনের মাধ্যমে প্রাণীকুল এবং মানবকুলে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করা প্রয়োজন। আপনাদের সহায়তায় মৎস, দুগ্ধ, পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু আমরা এখনো অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী হতে পারিনি। তথাপিও জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে ইতোমধ্যে ক্ষুধা মুক্ত, সন্ত্রাস মুক্ত, নাশকতা মুক্ত, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হতে পেরেছি। বাংলাদেশ অবকাঠামো সহ সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আগামী ২০৪১ সালে প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিন‘র নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট দেশে পরিণত হবে। জাতির জনকের সেই সোনার বাংলা গড়ার কারিগর আপনারা এবং উন্নত বাংলাদেশে লাইভস্টক সেক্টর একটি স্মার্ট লাইভস্টক সেক্টরে পরিণত হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে দৃঢ বিশ্বাস করি।” বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সভাপতি ডাঃ মোঃ মনজুর কাদিরের সভাপতিত্বে অবহিতকরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সদস্য ও প্রাক্তন সভাপতি ডা: আব্দুর রউফ মোল্লা; বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর, খুলনার পরিচালক ডা: মোঃ লুৎফর রহমান; বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের সদস্য ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ডাঃ খন্দকার মাজহারুল আনোয়ার শাহজাহান; প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাক্তণ উপ-পরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস এবং আইএলএসটি, খুলনার পরিচালক ডা: নূরুল্লাহ মোঃ আহসান-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং স্টকহোল্ডারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button