আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে অর্ধ ডজন নেতার দৌঁড়-ঝাপ : বিএনপিসহ অন্যান্য দল সিদ্ধান্তহীনতায়

খুলনা ৫ আসন
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান ঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) আসনে আ’লীগের মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। মনোনয়ন প্রত্যাশী ৬ নেতার সমানতালে চলছে লবিং-গ্রুপিং, গণসংযোগ এবং নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে নিয়ে আসার নানান চেষ্টাও। দুই উপজেলা ফুলতলা আর ডুমুরিয়া নিয়ে গঠিত হয়েছে খুলনা-৫ আসন। ফুলতলার একাংশ জুড়ে রয়েছে নানা শিল্প-কলকারখানা। আর ডুমুরিয়ার খ্যাতি রয়েছে কৃষিপণ্য উৎপাদনে। ডুমুরিয়ার ১৪টি ও ফুলতলার ৪টিসহ মোট ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে খুলনা-৫ আসনের বিস্তৃতি। এর তিন দিকে রয়েছে তিন জেলার সীমানা। সাতক্ষীরা, যশোর ও নড়াইল। রাজনৈতিক দিক দিয়ে আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। এ কারণে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এখানে অনেক বেশি তৎপর। তবে নিজেদের মধ্যে অসন্তোষের অন্ত নেই। বিপরীতে বিএনপিও মনে করে দল নির্বাচনে এলে এ আসনে তাদেরও জয়ী হওয়ার সামর্থ্য রয়েছে। তাই ক্ষমতাসীন দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকে কাজে লাগাতে চায় অন্যরা। তবে বিএনপিসহ অন্যান্য দল এখনও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা কুবের চন্দ্র বিশ্বাস। এরপর ১৯৭৯ সালের আওয়ামী লীগের প্রফুল্ল কুমার শীল বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সালে জাপার বীর উত্তম মোহাম্মদ আবদুল গফ্ফার হালদার (বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল ছিলেন) নির্বাচিত হয়ে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন এই আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন প্রয়াত নেতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আইনজীবী সালাহউদ্দিন ইউসুফ। ১৯৯১ সালে তিনি প্রথম আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। যিনি বঙ্গবন্ধুর সরকারেরও মন্ত্রী ছিলেন। আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরে দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকার সময় মারা যান তিনি। আর ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি আলোচিত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক ডা. গাজী আবদুল হক জয়লাভ করেছিলেন। আর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে চার হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে বিএনপি-জামায়াতের জোটপ্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জয়লাভ করেন। আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না এলে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নারায়ন চন্দ্র চন্দ বিজয়ী হয়েছিলেন। জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ন চন্দ্র চন্দসহ খুলনা-৫ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন ৬ জন নেতা। এরা হলেন- জেলা আ’লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অজয় সরকার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সদর থানা আ’লীগের সভাপতি এড. সাইফুল ইসলাম, জেলা আ’লীগের সদস্য মোঃ আজগর বিশ্বাস তারা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোস্তফা সরোয়ার ও জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি ড. মাহাবুবউল ইসলাম। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব নেতারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে নানা ধরণের লবিং-গ্রুপিং নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। অনেকে নির্বাচনীয় এলাকায় এসে গণসংযোগসহ তৃণমুল কর্মীদের নিজের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টাও করছেন। অধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকার কারণে খুলনা-৫ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে প্রার্থিতার লড়াই তুঙ্গে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াতের জোটগত নির্বাচন হলে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও জোট প্রার্থীর মধ্যে। অন্যথায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন-বিএমএর সাবেক সভাপতি ডা. গাজী আবদুল হক। তবে প্রার্থী হতে পারেন জামায়াতে ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার। যিনি বর্তমানে নাশকতা মামলায় কারাগারে। অন্যদিকে সংসদের বর্তমান বিরোধী দল জাপার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলা কমিটির সভাপতি মো. শাহিদ আলম মোড়ল কিংবা জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ জমাদ্দার মনোনয়নপ্রত্যাশী। আর সিপিবি থেকে নির্বাচন করতে পারেন জেলা শাখার সম্পাদকম-লীর সদস্য ও ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সভাপতি চিত্ত রঞ্জন গোলদার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই আসনে মাওলানা মুজিবুর রহমানকে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে।