স্থানীয় সংবাদ

যশোর সিটি ক্যাবলে ঘাটে ঘাটে দুর্নীতি : ৩২ জনের কার্যক্রমে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ

অবৈধ পন্থায় শেয়ার কেনা-বেচা

যশোর ব্যুরো : যশোর সিটি ক্যাবল প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে ৩২ জনের কাছে শেয়ার বিক্রি করেছে। এক্ষেত্রে যেমন আইনের তোয়াক্কা করা হয়নি তেমনি টানা দুই দশক প্রতিষ্ঠানটিতে হয়নি আয় ব্যয়ের হিসেব বা অডিট। কোম্পানি আইন অনুয়ায়ী বার্ষিক সাধারণ সভা করা বাধ্যতামূলক হলেও যশোর সিটি ক্যাবল এসবের কিছুই করেনি। এসব কর্মকান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত ৩ আগষ্ট সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট দাখিল করা হয় (আবেদনের কোম্পানির ম্যাটার নং-২৯২/২০২৩)। ১১ ডিসেম্বর রিট শুনানি শেষে মহামান্য আদালতের বিচারক কোম্পানির ২১ নং সিরিয়াল থেকে ৫২ নং পর্যন্ত শেয়ার হোল্ডারদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযুক্তদের আদেশ জারির দিন থেকে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে সংশি¬ষ্ট আদালতে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
যশোর সিটি ক্যাবল প্রাইভেট লিমিটেড ২০ জনকে নিয়ে গঠিত ১৩ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০০৩ সালে। প্রতিষ্ঠানটি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় অফিস কোম্পানি আইনে রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার পর ১৯৯৪ সনের কোম্পানি আইনের ধারা ৮১(২) তৎসহ ৮৫(৩) ও ৩৯৬ ধারা অনুসারে পরিচালিত হয়নি। ২০ জন নিয়ে যাত্রা শুরুর পর আরও ৩২ জনকে অবৈধ পন্থায় শেয়ারহোল্ডার করা হয়েছে। শেয়ার কেনা-বেচার ক্ষেত্রেও মানা হয়নি কোম্পানি আইন। নিয়ম মেনে হয়নি বার্ষিক সাধারণ সভা ও অডিট। অথচ টানা দুই দশকে শেয়ার দাঁড়িয়েছে ৪ কোটিতে। কিন্তু ব্যবসার প্রসার ঘটলেও সরকার সেভাবে রাজস্ব পায়নি। যার তথ্য প্রমাণ সংশি¬ষ্ট প্রতিবেদকের হস্তগত হয়েছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ঘাটে ঘাটে হয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতি। টানা এসময়ে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তথ্য গোপন করে ও অনৈতিক সুবিধা দিয়ে যৎসামান্য রাজস্ব দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে খোদ প্রতিষ্ঠানটির অনেকের মনে রয়েছে ক্ষোভ। সূত্রমতে, বিশেষ ব্যবস্থায় রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি মাথায় নিয়ে এবং কোম্পানি আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠান সংশি¬ষ্টরা কমিটি গঠন করা থেকে শুরু করে যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। গত ১১ আগষ্ট বরাবরের মতো কোম্পানি আইন ভেঙে প্রতিষ্ঠানটির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন হয়। যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩০ জন ভোট দেয়। তালিকা অনুয়ায়ি ভোটার ৪২ জন। কিন্তু কোম্পানি আইন অনুয়ায়ি প্রথম গঠিত কমিটির ২০ জন বৈধ ভোটার ও শেয়ারহোল্ডার। পরবর্তীতে আইন ভেঙে যে ৩২ জনকে শেয়ারহোল্ডার করা হয়েছে তাদের কোম্পানি আইনে বৈধতা নেই। সুতরাং যাদের শেয়ার হোল্ডার বৈধ না, তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নেই। এরআগে তারা নজিরবিহীন একটি আহবায়ক কমিটিও গঠন করে। কথিত ওই নির্বাচনে রুহুল কুদ্দুস মুকুল চেয়ারম্যান, উত্তম কুমার চক্রবর্তী বাচ্চু ভাইস চেয়ারম্যান ও কাজী বর্ণকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত হন। কমিটির অন্যদের মধ্যে রয়েছেন-তাদের অধিকাংশই বৈধ শেয়ার হোল্ডার না। তারা হলেন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, পরিচালক (প্রশাসন) খায়রুল বাশার শাহীন, পরিচালক (দপ্তর) মোস্তফা গোলাম কাদের, পরিচালক (কারিগরি) মাহমুদুল ইসলাম মাহমুদ, পরিচালক (অর্থ) রিজাউল হাসান, পরিচালক (বিপণন) শংকর পাল, পরিচালক (ইন্টারনেট) আমিনুল ইসলাম ও পরিচালক (পরিকল্পনা) আফজালুল করিম রানু। যশোর সিটি ক্যাবল (প্রাঃ) লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা ২০০৩-২০২৩ পর্যন্ত আইন অনুযায়ী না হওয়ায় ও তথাকথিত অবৈধ আহ্বায়ক কমিটি গঠনসহ যাবতীয় কার্যক্রম কোম্পানি আইনপরিপন্থী হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। ৩ আগস্ট দায়েরকৃত আবেদনের কোম্পানির ম্যাটার নং-২৯২/২০২৩। আবেদনে মহামান্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগের নজরে এনে বলা হয়-প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সনের কোম্পানি আইনের ধারা ৮১(২) তৎসহ ৮৫(৩) ও ৩৯৬ ধারা অনুসারে পরিচালিত হয়নি। আইনজীবীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে বিজ্ঞ বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী আবেদনটি গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টেরর সংশি¬ষ্ট শাখাকে উক্ত দরখাস্তের এবং আদেশ বিবাদীগণের প্রতি রেজিস্টার্ড পোস্টের মাধ্যমে জারীর নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে কথিত ওই নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়। অবশেষে গত ১১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট শুনানি শেষে আইন ভেঙে শেয়ার হোল্ডার করা ৩২ জনকে যশোর সিটি ক্যাবল প্রাইভেট লিমিটেডের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আদেশ জারির ৩ মাসের মধ্যে তাদের আদালতে জবাব দিতেও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কথিত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন-আমরা আপিল করবো। অন্যান্যরাও অনুরুপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তবে আফজালুল করিম রানুকে সাংবাদিকরা কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button