স্থানীয় সংবাদ

পাইকগাছায় জীব বৈচিত্রের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

খরা লবণাক্ততা পানির উচ্চতা বৃদ্ধি উদ্বেগজনক

এম. মোসলেম উদ্দীন আহম্মেদ, পাইকগাছা প্রতিনিধি ঃ
উপকূল এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি ভারসাম্য হারিয়ে, মাত্রাতিরিক্ত খরা, গরম, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গন, ঝড়, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, মৎস্য প্রাণিসম্পদ ও মানবজাতির ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশের উপকূল এলাকার সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি আজ উলোট পালোট। দেশে ৫০ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা চলতি বছর সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে। যার তাপমাত্রার পরিমাণ ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা, নদীর তলদেশ উচ্চতা ও ভাঙ্গন বেশি আকারে দেখা দিয়েছে। শিবসা,কপোতাক্ষ, মিনাজ, হাড়িয়া নদী আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। যে নদীতে একসময় খর স্রোতের কারণে লঞ্চ, জাহাজ, স্টিমার চলা কষ্ট হয়ে পড়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন জলবায়ুর কারণে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, পানির উপরিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি, ভেড়িবাধ ভেঙে এলাকায় পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি, জলবদ্ধতা, খরা, অতিবৃষ্টির কারণে কৃষি ফসলাদির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। সাধু পানির অভাবে আজ দেশীয় প্রজাতির শৈল, কৈ, টাকি, জিয়েল, মাগুর বিলীন হয়ে গেছে। গরু, মহিষ, ছাগল খাদ্যের অভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গাছপালায় তেমন কোন ফল আসছে না এবং রোগগ্রস্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। দেশি প্রজাতির ধান হরিভোক, খাজুরশোড়, বালাম ধান আজ বিলীন। অন্যদিকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অপরিকল্পিত ভাবে ইটের ভাটা নির্মাণ করায় কালো ধোয়ার কারণে এলাকায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিরাজমান এই পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মোঃ আব্দুর রব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতি আজ দিকবিদিক হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে জীব বৈচিত্র। জলভূমি হচ্ছে মরুভূমি। আর সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূল এলাকার মানুষ। তিনি আরো বলেন, জীবিকায় সরাসরি প্রকৃতির ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে প্রভাব ফেলেছে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গন, সামুদ্রিক মাছ কমে যাওয়ার ফলে জেলেরা অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে। তিনি আরো বলেন খরা, বজ্রপাত, শিলা বৃষ্টি, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এই এলাকায় মহামারী প্রার্দুভাব দেখা দিতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব খাল খনন, নদী খনন, পুকুর খনন, গাছপালা বাড়ানোর দ্রুত ব্যবস্থা নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের নীতিবাচক কিছুটা প্রভাব মোকাবেলা করা সম্ভব।
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক জেনারেল শাহজাহান কবির বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে আজ সাধু/সুপেয় পানির অভাবে হরিভোগ, খাজুরছোড়, বালাম ধান উপকূলীয় অঞ্চল সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলায় বিলীন হয়েছে। সরকারের হস্তক্ষেপে ও জনগনের সচেতনতায় জলবায়ুর প্রভাব হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় নিয়ে এনজিও ডরপ ও সুশীলন পানিই জীবন প্রকল্প পাইকগাছা উপজেলায় কাজ করে চলছে। ডরপ ও সুশিলন পানিই জীবন প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়ক সায়েম হোসেন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চল সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলা অঞ্চলে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের সাধু/সুপেয় পানির অভাব মিটানোর জন্য কাজ করে চলেছি। পাইকগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানান, সাধু পানির চাহিদা মিটানোর জন্য সরকার সাধারণ জনগণের মধ্যে পানির ট্যাংক বিতরণ করে চলেছে। পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. কর্মকর্তা ডাঃ নীতিশ চন্দ্র গোলদার জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে নলকূপের পানিতে লবনাক্ততা ও আর্সেনিক এর কারনে মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই সরকার সুপেয় পানির জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য পানির ট্যাংকি বিতরন করে চলেছে। মটবাটি গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী জানান, শুধুমাত্র জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে চলতি আমন মৌসুমে পোকা আক্রমনের ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। যদি উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এলাকা ভিত্তিক পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখার আহবান জানান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button