খুলনাবাসীকে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ-হালাল নির্ভেজাল মাংস খাওয়াতে কেসিসি কঠোর অবস্থানে

নগরীর দু’শতাধীক হোটেল-রেস্তোরায় চিঠি
খলিলুর রহমান সুমনঃ খুলনা নগরবাসীকে সুস্থ্য সবল হালাল নির্ভেজাল মাংস খাওয়াতে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ চক্রকে কোনভাবেই ছাড় দিতে নারাজ কেসিসি। তারই ধারাবাহিকতায় কেসিসি ভেটেরিনারি দপ্তর খুলনা নগরীর দু’শতাধীক খাবারের দোকানে চিঠি দিতে শুরু করেছে। সম্প্রতি খুলনায় কুকুর জবাই করে সেই মাংস দিয়ে মুখরোচক খাবার তৈরীর অভিযোগ ও অসুস্থ্য এবং বৃদ্ধ গাভী জবাই দেয়ার পর কেসিসি নড়ে চড়ে বসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খুলনায় কুকুর জবাই করে তার মাংস খাসির মাংস বলে চালিয়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন করে আসছিল একটি চক্র। আর কুকুরের সেই মাংস দিয়ে বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরায় তৈরি হচ্ছিল বিরিয়ানি, বার্গার, গ্রিলসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার। এমনই একটি চক্রের চার সদস্যকে আটক করা হয়। গত ১৩ ডিসেম্বর বিকেলে নগরীর খালিশপুরস্থ খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে পরিত্যক্ত ভবন থেকে জবাই করা কুকুর, দু’টি ছুরিসহ তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো খালিশপুরস্থ ডলার হাউজ মোড় এলাকার লিংকন হাওলাদারের ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ তাজ (১৬), ২নং নেভিগেট এলাকার কুতুব আলীর ছেলে মোঃ সিয়াম (১৬), চরেরহাট এলাকার শোভন সরকারের ছেলে প্রেম সরকার (১৬) ও মাংস ক্রেতা খালিশপুর বঙ্গবাসী মোড় এলাকার নর্থ জোন -২৩ এর হাবিবুর রহমানের ছেলে মোঃ আবু সাইদ (৩৭)। তবে ঘটনার সাথে জড়িত আরমান, উৎস, রনি ও ফজল এখনো পলাতক রয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর কুকুরটি মাটি চাপা দেয়া হয়। এ ঘটনায় তেরখাদা উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ প্রিয়ংকর কুন্ডুর দাখিলকৃত প্রসিকিউশনের ভিত্তিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল ইমরান প্রানী সম্পদ আইন ২০১৯ এর ৭ ধারা এবং নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১১ এর ৩৪ ধারাা মোতাবেক আইনের জড়িত কিশোর ও অভিযুক্তকে আদালতে বিচারার্থে প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে মতে খালিশপুর থানা পুলিশ ওই দিন আসামীদের খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত-১ এ হাজির করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে শুনানী শেষে বিচারক মোঃ শরীফ হোসেন হায়দার তাদের জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। তবে যেহেতু চারজনের মধ্যে তিন জনের বয়স ১৮ বছরের নীচে। তাই তাদের তিনজনকে বিচারকের নির্দেশে যশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ১৩ ডিসেম্বর খালিশপুর থানা পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যার নং-৮২০। কুকুরের মাংসের খাসির বিরিয়ানি বিক্রি হতো এমন খবর সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর চলছে তুমুল আলোচনা ও নিন্দার ঝড়। বিষয়টি নিয়ে খুলনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি কয়েছে। বিষয়টি এখনও সবার মুখে মুখে। কুকুরের মাংসের বিষয়টি মুখরোচক আলোচনা শেষ না হতেই খুলনা নগরীর বাস্তহারা এলাকায় বুড়ো, অসুস্থ্য, গোপনে ও কসাইখানার বাইরে গরু (গাভী) জবাই করার দায়ে ভ্রাম্যমান আদালত দু’ জনকে ২০ দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে। কারাদন্ডপ্রাপ্তরা হলো-খালিশপুর বাস্তহারা ৩নং রোডের বাসিন্দা মৃতঃ ফুল মিয়ার ছেলে কসাই লিটন হোসেন(৫০) ও সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার মীর্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃতঃ আসাদ সরদারের ছেলে সাহিদুল সরদার(৪০)। একই সাথে জবাইকৃত গরুর পুরো মাংস (আনুমানিক ৬০ কেজি) জব্দ করে নগরীর গোয়ালখালি সমাজসেবা অধিদপ্তরের পিএইচটি সেন্টারে হস্তান্তর করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ হাজার টাকা। ২২ ডিসেম্বর খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি অফিসার ড. পেরু গোপাল বিশ্বাসের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন সিফাত মোঃ ইশতিয়াক ভূইয়া। এসব ঘটনার পর নড়ে চড়ে বসেছে কেসিসি। তারই ধারাবাহিকতায় কেসিসির ভেটেরিনারি দপ্তর ইতোমধ্যে দু’শতাধীক খাবারের দোকানে (হোটেল-রেস্তোরা) চিঠি দেয়া শুরু করেছে। গত ২০ ডিসেম্বর থেকে চিঠি বিলি শুরু হয়েছে। এখনও চলছে বলে জানান কেসিসির ভেটেরিনারি অফিসার ড. পেরু গোপাল বিশ্বাস। শিগগিরই এ চিঠি বিলি করা শেষ হবে বলে তিনি জানান। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, খুলনা মহানগরবাসীকে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ-হালাল মাংস সরবরাহ, মাংসজাত পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণের নিশ্চিত ও মাংসের উৎস সংক্রান্ত গুজবরোধের লক্ষ্যে মহানগরী এলাকায় অবস্থানরত সকল হোটেল-রেস্তোরাসহ অন্যান্য খাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাংস ক্রয়ের পূর্ণাঙ্গ তথ্য, রশিদ সংরক্ষণের (হালনাগাদ কমপক্ষে এক মাসের তথ্য) জন্য বলা হলো। মাংসজাত খাদ্য ব্যবসায়ীদের লিখিত তথ্যাদি সংরক্ষণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। মহানগরীর সকল হোটেল-রেস্তোরা সহ অন্যান্য খাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীগণকে কেসিসি’র মাংস বিক্রির লাইসেন্স বিহীন কোন মাংস ব্যাবসায়ীর নিকট হতে মাংস ক্রয় করা যাবে না। তবে, অন্য শহর বা বিদেশ হতে আমদানী করা হলে ভেটেরিনারি পরীক্ষার সনদসহ অন্যান্য কাগজ পত্রাদি থাকতে হবে। সংরক্ষণকৃত মাংস ক্রয়ের পাকা রশিদে মাংস ব্যবসায়ীর নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, মাংস ক্রয়ের তারিখ, মাংসের নাম ও পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে। যদি মাংস ক্রয়ের রশিদ না থাকে তবে, রেজিস্টার (হোটেল-রেস্তোরা সহ অন্যান্য খাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী/পরিচালক রেজিস্টার সংরক্ষণ করবেন) খাতা তৈরী পূর্বক মাংস ব্যবসায়ীর নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, মাংস ক্রয়ের তারিখ, মাংসের নাম ও পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে। উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসরনের জন্য অনুরোধ করা হলো। মাংসের উৎস সম্পর্কিত যথাযথ কাগজপত্র প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে, কোন পশুর মাংস ও সঠিক উৎসের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হলে, আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রিমিসেস লাইসেন্স বাতিল করাসহ পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১১, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এবং নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ অনুসারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন ভেটেরিনারি অফিসার ড. পেরু গোপাল বিশ্বাস স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। ড. পেরু গোপাল বিশ্বাস বলেন, অসাধু মাংস বিক্রেতাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। নগরবাসীতে হালাল মাংস খাওয়াতে কেসিসি সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যাতে কওে আর কোন চক্র কুকুরের মাংস খাসির মাংস বলে বিক্রি করতে না পারে। আর কোন চক্র মহিষের মাংস গরুর মাংস বলে বিক্রি করতে না পারে। অসুস্থ্য ও মৃত গরুর মাংস যাতে বিক্রি করতে না পারে সে ব্যাপারে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বেল এই কর্মকর্তা জানান। খালিশপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, কুকুর জবাইয়ের পর চারজনকে গ্রেফতার করা ও কারাগারে প্রেরণ পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। বাকী যাদের নাম বলেছে তারা সবাই কিশোর বলে পুলিশ তাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে তেমন উৎসাহ পাচ্ছে না বলে তিনি বলেন।