স্থানীয় সংবাদ

প্রচারণার মাঠে রশীদুজ্জামান-মোরশেদ-মাহবুব

খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা)

স্টাফ রিপোর্টারঃ আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে খুলনা-৬ আসনে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। খুলনার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় এলাকা ১০৪, খুলনা-৬ আসন। আসনটিতে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন মোট ৭ জন প্রার্থী। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরেও দেখা মিলছে না কয়েক জনের। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে প্রার্থীদের চিন্তা ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে। কয়রা-পাইকগাছা এলাকাটি বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাবিত এলাকা। এবার বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তাছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন ধারণা হয়েছে যে, দল ও স্বতন্ত্র যারাই পাস করবে তারা সরকারি দলের হবে। সে কারণে অনেক আওয়ামী সমর্থকও ভোট কেন্দ্রে যাবে না এমনটি মনে করছেন এলাকাবাসী। এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত এই এলাকার মানুষ নানা কারণে বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। তাদের কাছে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি মোকাবেলাই হচ্ছে মূখ্য। যে কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে ভোটের আগ্রহ নেই। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি আঞ্চলিকতারও একটি প্রভাব পড়তে পারে এবারের নির্বাচনে। নির্বাচনি এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন আ’লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মোঃ রশীদুজ্জামান, বিএনএম মনোনীত নোঙর প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী জি এম মাহবুবুল আলম। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে মূলতঃ ভোট যুদ্ধ হবে এই ৩ প্রার্থীর মধ্যে বলে মনে করেন সাধারণ ভোটাররা। এর মধ্যে জি এম মাহবুবুল আলম একাই কয়রা উপজেলার বাসিন্দা। সেখানে তার ভোট বেশি হবে এমনটি মনে করছেন সকলে। তবে শেষ পর্যন্ত বিগত দিনের পুরানো ক্ষত মুছতে না পারলে, পাইকগাছার ভোটারদের বড় অংশ বিএনএম’র প্রার্থী ব্যারিস্টার এস এম নেওয়াজ মোরশেদ মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে আসতে পারেন আ’লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খুলনা-৬ আসনে দলের কর্মী-সমর্থক ও এলাকাবাসীকে চমকে দিয়ে সবচেয়ে কম আলোচিত ও নতুন মুখ হিসেবে পরিচিত, এক সময়কার কম. রশীদুজ্জামান নামে পরিচিত সিপিবি নেতা ও বর্তমানে আ’লীগ নেতা মো. রশীদুজ্জামান নৌকার মনোনয়ন পেয়েই তৎপরতা শুরু করেন। এর আগেও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি সিপিবির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। এমন কি জামানত হারিয়েছেন। একসময় পাইকগাছা উপজেলা আ’লীগের সদস্য সচিব ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রশীদুজ্জামানের বর্তমানে দলে কোনো পদ নেই। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে (মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জামানত হারানোর পর থেকে দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। পাইকগাছা উপজেলায় রশীদুজ্জানের পরিচিতি থাকলেও কয়রা উপজেলায় তার তেমন পরিচিতি নেই। মনোনয়ন পাওয়ার আগে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়ও ছিলেন না তিনি। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে কয়রা উপজেলার মানুষের মুখে মুখে এখন একটাই প্রশ্ন-কে এই নেতা, যিনি বাঘা বাঘা নেতাকে টপকে মনোনয়ন পেয়েছেন। মো. রশীদুজ্জামানের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোর রিসভি করেননি। তবে গত শনিবার তার নির্বাচনী এলাকার চাঁদখালীতে এক মতবিনিময় সভায় দলীয় নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শপথ নিয়েছেন, নির্বাচনে নৌকা মার্কা বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেবেন। আসনটিতে প্রতীক পাওয়ার পর বিএনএম মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার এস এম নেওয়াজ মোরশেদ ‘নোঙর’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। তরুণ এ প্রার্থী বর্তমানে তিনি ঢাকার হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এলাকার ক্রীড়া সংগঠন ও ক্রীড়া ব্যক্তিদের সাথে তার নিবিড় একটি সম্পর্ক রয়েছে। এলাকার তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখাসহ খেলাধুলার মাধ্যমে এলাকার পরিচিতি বাড়াতে তিনি দীর্ঘদিন এলাকার খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন। সাধারণ ভোটার ও তরুনদের মধ্যে তাকে নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। ব্যারিস্টার এস এম নেওয়াজ মোরশেদ বলেন সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় পাইকগাছা-কয়রা’য় অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনী এ এলাকা এখনো অনেক অবহেলিত রয়েছে। সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তরুণ ও যুব সমাজের তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর আর্থকর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে চাই। অন্যদিকে শেষ পর্যন্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী খুলনা জেলা আ’লীগের কোষাধ্যক্ষ প্রকৌশলী জি এম মাহবুবুল আলম প্রার্থিতা ফিরে পেলে আসনটির দৃশ্যপটই বদলে যায়। হলফনামায় স্বাক্ষর না করাসহ নানা ত্রুটির কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা হলে রশীদুজ্জামান ও তাঁর অনুসারীরা অনেকটা নিশ্চিন্ত ছিলেন। এখন সহজেই রশীদুজ্জামান নির্বাচনে পার হতে পারবেন না বলে জানিয়েছে সাধারণ ভোটার ও দলীয় কর্মীরা। কয়রা উপজেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, মাহবুবুল আলম প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে। নৌকার পক্ষে নেতাকর্মীর ঐক্য দেখা গেলেও ভোটে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে থাকবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
নির্বাচনে লড়াই প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুল আলমকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তার একনিষ্ঠ কর্মী জানান, এবার দলের বাইরে গেলে বহিষ্কারের কোনো ঝুঁকি নেই। যে কারণে দল মনোনীত প্রার্থী ও প্রতীকের বিরুদ্ধে দলের ব্যাপক অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুব আলমকে ভোট দেবে। নিরব বিপ্লব হতে পারে বলে তিনি জানান। আসনটিতে রশীদুজ্জামান, নেওয়াজ মোরশেদ ও মাহবুবুল আলম ছাড়াও প্রার্থী রয়েছে জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু, এনপিপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম, জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী শেখ মর্তুজা আল মামুন ও তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদির উদ্দিন খান। জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু বহিরাগত হওয়ায় দলটির স্থানীয় রাজনীতিতে নেই তেমন কোন উৎসাহ। তিনি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এলাকাবাসীর জন্য কাজ করে আসছেন। নির্বাচনও করেছেন একাধীকবার। কিন্তু কোনবারই জয়ী হতে পারেননি। এবারও তিনি প্রার্থী হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামছেন না। আ’লীগ, বিএনএম ও আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাইরে অন্য দলের প্রার্থীদের কোনো পরিচিতি নেই ভোটারদের কাছে। এলাকার মানুষ অনেকের নামও শোনেননি। ভোটারদের ধারণা আসনটিতে মূলত এই তিন প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button