পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে সুন্দরবনের কালাবগী ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র

রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ঃ বিশ্বের ঐতিহ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরুপ লিলা ভুমি সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য নতুনভাবে সাজানো হয়েছে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কালাবগী ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র। সেখানে উপস্থিত হলে পর্যটকদের মন কেড়ে নেয় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও তার অবকাঠামো। বর্তমানে ঐ স্থানটিতে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠছে অল্প দিনে। গত শুক্রবার সকালে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বনে গিয়ে একটু ভিন্ন রকমের মনে হয়েছে তাদের। কালাবগীতে হরিণের পাল দেখা গেছে নদীর চরে। পর্যটন কেন্দ্রটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়ায় বনে চলাচলও সহজ হয়েছে। বদরুল আলম নামের এক পর্যটক বলেন, তিনি আগে সুন্দরবন ঘুরে এসেছেন। মোংলা থেকে রওনা হয়ে করমজল, হাড়বাড়িয়া, নীলকমল ও কটকা ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র পরিদর্শনে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার কালাবগী গিয়ে একটু ভিন্ন রকমের আনন্দ উপভোগ করেছি। সেখানে বেশ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রের অপর পাশে হরিণের পাল দেখতে পেয়েছি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভারপুর সুন্দরবনের আসল চেহারা উপলব্দী করা সম্ভব হয়েছে। বন বিভাগ জানায়, আগে সুন্দরবনে পর্যটকদের জন্য সাতটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র ছিল। এত বেশি মানুষের মাত্র সাতটি স্থানের যাতায়াতের ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছিল সেখানে সার্বিক পরিবেশ। পর্যটকদের ভারে বনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো এবং তাদের ভ্রমণ আরও সুচারু করার জন্য পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয় বন বিভাগ। সম্প্রতি নতুন করে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক আর পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের খুলনা রেঞ্জে শেখেরটেক ও কালাবগীতে আরও চারটি পর্যটন স্পট তৈরি করা হয়েছে। নতুন নির্মাণাধীন কালাবগী ইকো ট্যুরিজমের কেন্দ্র সম্প্রতি পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পর্যটকদের জন্য সেখানে তৈরি করা হয়েছে নৌযান থেকে ওঠানামার পন্টুন, ওয়াচ টাওয়ার, বসার জন্য গোলঘর। বনের মধ্যে কিছুটা হাঁটাহাঁটির জন্য তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের ফুট ট্রেইল। সেখানে খাঁচায় রাখা হয়েছে হরিণ ও কুমির। তবে কালাবগীতে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে প্রায় সর্বক্ষণই অবাধ যাতায়াত করতে দেখা মেলে বন্য শুকর, বানর, গুইসাপ ও চিত্রল হরিণের। আবার কোথাও কোথাও বাঘের পায়ের ছাপ। কালাবগী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুল হাকিম বলেন, ‘এ বছর মৌসুম শুরু হতেই কালাবগী কেন্দ্রে প্রচুর পর্যটক আসা শুরু করেছেন। আমরা স্টেশনের গাছগুলোতে স্থানীয় নাম ও বৈজ্ঞানিক নাম লিখে দিয়েছি। ফলে পর্যটকরা এতে সহজে গাছের পরিচিতি জানতে পারছেন। বনের বিভিন্ন প্রাণীর নামের তালিকা ও বর্ণনা নানা স্থানে টানানো হয়েছে। যাতে কোনো বন্য প্রাণী পর্যটকরা দেখলে তার বাহ্যিক স্বভাব বুঝতে পারে। ফলে পর্যটকরা তাদের বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকবেন।’এ ছাড়া সুন্দরবনের শেখেরটেক এলাকায় ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। সেখানে ৪০০ বছরের পুরোনো একটি কালীমন্দির ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। তবে ইতিমধ্যে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দিতে শুরু করেছে বন বিভাগ। শেখেরটেক ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রটিও কালাবগী ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন। ওই স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুল হাকিম আরও বলেন, ‘শেখেরটেক ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রেও পর্যটকের যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় সব সময় বন বিভাগ নিরলশভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সল্প সময়ে কালাবগী ও শেখেরটেক ইকোট্রুজেম কেন্দ্র দুটি মানুষের কাছে অতি আকষনীয় স্থান হিসাবে পরিচিত পেয়েছে। খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পরিদর্শনে গিয়ে সবাই ইতিবাচক কথা বলছেন। সেখানে নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মান করা হয়েছে।