স্থানীয় সংবাদ

খুলনায় মাটি ফেলে ময়ূর নদী ভরাটের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার : শহরতলীর সঙ্গে নগরকে যুক্ত করা খুলনার গল্লামারিতে নির্মিতব্য ঝুলন্ত সেতু’র খননের মাটি ফেলে ময়ূর নদী ভরাটের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এতে করে নদীর পানিপ্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। জলাবদ্ধতার সৃস্টি হচ্ছে আশপাশের এলাকা। যদিও ঠিকাদারের কান্ডজ্ঞানহীন এ কর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিকারের জন্য সড়ক বিভাগকে চিঠি দিয়েছে খোদ সিটি কর্পোরেশন। এদিকে, সেতু নির্মান করতে গিয়ে মাটি ফেলে নদী ভরাটের ঘটনাকে ‘গলা টিপে নদী হত্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবাদিরা। ময়ূর নদীর গল্লামারি পয়েন্টে আগে নির্মিত দু’টি পুরাতন সেতু ভেঙ্গে সম্প্রতি ঢাকার হাতির ঝিলের আদলে ঝুলন্ত সেতু নির্মান কাজ শুরু হয়। এটি খুলনার প্রথম ঝুলন্ত সেতু। জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর প্রবেশ পথ গল্লামারীতে ময়ুর নদীর উপর পাকিস্তান আমলে একটি ব্রীজ নির্মান করা হয়। এই ব্রিজের মেয়াদ শেষ হবার কারণে ২০১৫ সালে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও একটি নতুন ব্রীজ নির্মান করা হয়। কিন্তু ব্রীজটি নদীর উপরিভাগে উচ্চতা কম থাকায় নদী দিয়ে কোন নৌযান চলাচল করতে পারে না। ব্রীজের উচ্চতা কম থাকায় তৎকালীন এর নির্মান কাজ বন্ধ করতে সিটি কর্পোরেশন থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে পত্র দেয়া হয়। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিষয়টিতে গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো সিটি কর্পোরেশনর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আনে। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন সে চিঠি প্রত্যাহার করে নেয় বলে নিশ্চিত করেছেন কেসিসি’র প্রধান প্লানিং আফিসার আবির-উল-জব্বার। পরবর্তীতে গল্লামারিতে নির্মিত দ্বিতীয় ব্রীজটি চালু হলে সকল মহল থেকে আপত্তি করা হয়। এরপর আবার একই স্থানে নতুন করে ব্রীজ নির্মানের সিদ্ধান্ত হয়। তবে দু’টি সেতুর পিলারের কারণে নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নতুন করে পিলার ছাড়া দৃষ্টি-নন্দন ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয় গেল বছরের ১ অক্টোবর। প্রায় ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৮ দশমিক ৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৩ দশমিক ৭০ মিটার প্রস্থ এই ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণের ঠিকাদার ‘ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্যয়-সংকোচনের জন্য নদীর ভিতর মাটি ফেলে ভরাট করেছে। ফলে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ম্যানেজার মো: আব্দুল করিম জুয়েল জানান, দু’টি ব্রীজ ভাঙ্গার জন্য তারা মাটি দিয়ে নদীর অংশ ভরাট করছেন। তিনি স্বীকার করেন নদী ভরাট করে প্রবাহ বন্ধ করায় খুলনা সিটি কর্পোরশেনের নির্বাহী প্রকৌশলী ‘ক অঞ্চল’ পত্র দিয়ে জানিয়েছেন নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় পাশ^বর্তী ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে নদীর পানি প্রবাহ সচল রাখতে পত্র দিয়েছেন। এই পত্রের পর তারা পাইপ দিয়ে পানি সরানোর কথা ঠিকাদারকে জানিয়েছেন। একই কথা বলেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, পুরাতন পিলার ভাংগার জন্য তারা এই মাটি দিয়ে ভরাট কাজ করছেন। তবে এই নদী ভরাট ওয়ার্ক অর্ডারে নেই- এমন কথা জানালে তিনি কোন জবাব দেননি। অপরদিকে, নদী শাসনের নামে মাটি ফেলে ভরাট করাকে ‘গলা টিপে নদী-হত্যা বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবিদ ও নাগরিক নেতা এ্যাড. বাবুল হাওলাদার। তিনি বলেন, ময়ুর নদী খুলনা মহানগরীর প্রাণ। এই নদীর পানি প্রবাহ সচল রাখতে শত শত কোটি টাকা দিয়ে যেখানে ময়ুর নদী খনন করা হচ্ছে, সেখানে ঠিকাদারের অর্থ বাচাঁতে এই মাটি দিয়ে ভরাট করে নদীকে গলা টিপে হত্যা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপাওে খুলনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আনিসুজ্জামান মাসুদ জানান, নতুন ব্রীজের ভীত নির্মাণের জন্য সাময়িক নদী ভরাট করা হয়েছে, তবে নদীর পানি প্রবাহ সরানোর জন্য পাইপ দেয়া হবে। নদীর পানি পাইপ দিয়ে সরানো সম্ভব কিনা? এমন প্রশ্ন করলে তিনি নিরব থাকেন। এছাড়া ওয়ার্ক অর্ডারে এই নদী ভরাট করার বিষয় নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি। এময়ূর নদী দিয়ে মহানগরী খুলনার বৃষ্টিপাতের পানিসহ সকল ড্রেনের পানি নির্গত হয়। এ কারণে এই নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে খনন করতে ইতোমধ্যে খুলনা সিটি কর্পোরেশর ৩শ’ কোটি টাকার বেশী ব্যয় করেছে। সেখানে মাটি দিয়ে নদী ভরাট করায় সিটি কর্পোরেশনসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টিতে উর্ধতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button