নগরীতে অবৈধ ক্লিনিক-ডায়াগণস্টিক সেন্টার ১০টি : অনলাইন আবেদনের ওপর চলে ১৪
চিকিৎসা ব্যবস্থায় অরাজকতা

নগরীতে ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার ২৭০ টি : ২০২৪ সাল পর্যন্ত নবায়ন আছে ৯৮টি
ডায়াগণস্টিক সেন্টারের নবায়ন নেই ১০২টি, ক্লিনিকে ৫৫টি
এক বছরে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার ২৫০ টাকা
কামরুল হোসেন মনি ঃ খুলনা মহানগরীতে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০টি। এছাড়া অনলাইনে আবেদন ওপর ভিত্তিতে করে পরিচালনা করছেন এমন সংখ্যা রয়েছে ১৪টি। খুলনা মহানগর ও উপজেলাগুলোতে অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার প্রশাসনের নজর এড়িয়ে বছরের পর বছর পরিচালিত হচ্ছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান খুলনা সিটিতে ও উপজেলায় পর্যায়ে বেশি। অনেকে শুধুই অনলাইনে ওপর আবেদন করেই ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার পরিচালিত করছে। আবার অনেকেই কোন আবেদন না করেই পরিচালনা করছেন। অনেকে লাইসেন্স পেলেও বছরের পর বছর নবায়ন না করেই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজস এবং সঠিক তদারিক না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে নজরদারি না থাকায় এই অরাজকতা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এসব অননুমোদিত ও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারন করেন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, খুলনা শহরে ২৭০ টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এদের মধ্যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নবায়ন রয়েছে ৯৮ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের। এছাড়া নবায়ন হয়নি এমন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ১৫৭টি। এর মধ্যে ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০২টি এবং ক্লিনিক আছে ৫৫ টি। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের এক বছরের, কারো ২ বছরের কারো বা ৩ বছরের আবার কেউ ৪ বছরেও কোন নবায়ন করেননি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, নগরীতে কোন আবেদন ছাড়াই এমন লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে রয়েছে খুলনা শিশু হাসপাতাল ( ক্লিনিক), খুলনা শিশু হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ( ডায়াগনস্টিক), খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল, ডায়াবেটিক সমিতি খুলনা (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-১ (ডায়াগনস্টিক), সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক-২ (ডায়াগনস্টিক), জাপান মেডিকেল সেন্টার (খুলনা শাখা-১) এবং নিউ পথ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র। এছাড়া নগরীতে শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদনের ওপরই অনেকেই বছরের পর বছর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করছেন কিন্তু লাইসেন্স নেই এমন অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে ১৪টি । এর মধ্যে রয়েছে বয়রা সেন্ট্রাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বয়ো ল্যাব ডায়াগণস্টিক সেন্টার এ- কনসালটেশন সেন্টার, নূরজাহান ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, কালিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কালিয়া ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পাল্প ডেন্টাল সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিক সেন্টার, মাই মেডিকেল ল্যাব ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, জেনারেল ডায়াগণস্টিক এন্ড রির্সোস সেন্টার, বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-১, বেস্ট কেয়ার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার-২, রহিমা ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার এবং শাবাব ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন সেন্টার। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮২ সালের মেডিক্যাল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। এসব বৈধ-অবৈধ অনেক হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।
ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারের সাথে জড়িত এমন একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্লিনিকের জন্য প্রতি বছর নবায়ন করতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা এবং ভ্যাট দিতে হয় ৭৫০০ টাকা। সব মিলে নবায়নে খরচ পড়ে ৫৭৫০০ টাকা। এছাড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নবায়ন করতে খরচ পড়ে ২৫ হাজার টাকা। যার ভ্যাট হয় ৩৭৫০ টাকা। এর বাইরে ট্রেডলাইসেন্স, পরিবেশের ছাড়পত্র, নারকোটিক, কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট এবং ফায়ার সার্ভিস এর জন্য নবায়ন করা জন্য আলাদা টাকা খরচ করতে হয়। সেই হিসেবে ওই দুইটি নবায়নের জন্য খরচ ধরলে এক বছরে ১৫৭ ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারের মোট সরকার রাজস্ব আয় হবে ৫৭ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা। খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ( স্বাস্থ্য) ডা: মো: মনজুরুল মুরশিদ বলেন, লাইসেন্সবিহী ও অবৈধ ক্লিনিক- ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। তাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। খুলনা সিভিল সার্জন ডা: মো: সবিজুর রহমান বলেন, খুলনা জেলায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম পাওয়ায় এ পর্যন্ত ৫-৬ টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন ও অবৈধ ক্লিনিক বা ডায়াগণস্টিক সেন্টারেরর বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি যাদের লাইসেন্স আছে কিন্তু শর্ত অনুযায়ি পরিচালনা করছেন না তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, খুলনা জেলায় অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কতগুলো আছে। তার জন্য একটি টিম মাঠে কাজ করছে। খুলনা জেলা প্রশাসকের সহকারি কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: মাসুম বিল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, খুলনায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, অনুমোদনহীন ল্যাব পরিচালনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপারেশন পরিচালনার নগরীতে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও লাইসেন্সের কাগজপত্র ত্রুটি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, একটি হাসপাতাল পরিচালনার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বৈধ সনদ, নিয়মিত নবায়ন, নারকোটিক পারমিট (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), পরিবেশ ছাড়পত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ক্ষতিকর ও অক্ষতিকর) কাগজপত্র সত্যায়িত করে সংরক্ষণ করতে হবে, যা পরিদর্শনকালে নিরীক্ষা করতে হবে। বিশেষ সেবার ক্ষেত্রে প্রতিটির শয্যা সংখ্যা, সেবা প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কর্তব্যরত চিকিৎসকের নাম ও কর্তব্যরত নার্সদের নাম-ঠিকানা, ছবি, বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন, বিশেষজ্ঞ সনদ, নিয়োগ ও যোগদান বা সম্মতিপত্র লাগবে। চিকিৎসা সাহায্যকারীদের তালিকা, যন্ত্রপাতির তালিকা, বর্তমানে যেসব অস্ত্রোপচার ও যন্ত্রপাতির তালিকা হাসপাতাল প্রধানের স্বাক্ষরসহ সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু কোনো হাসপাতালেই এসব শর্ত শতভাগ মানা হচ্ছে না।