মোংলা বন্দর চ্যানেলের খননকাজ পুনরায় শুরু

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি ঃ মোংলা বন্দরের ইনারবার খননের বালু রাখার জায়গার (ডাইক) জটিলতার কারনে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ ছিল খনন কাজ। গত শুক্রবার সাময়িকভাবে এ জটিলতা কেটে যাওয়ায় মোংলা বন্দরের ইনার বারের নৌ চ্যানেলে খনন কাজ শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বন্দরের বেসক্রিক বয়া এলাকা থেকে এই খনন কাজ শুরু হয়। প্রথমদিন সেকশন-৪ এর আওতায় বাল্কহেড ড্রেজারের মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞ শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সিভিল ও হাইড্রোলিক্স বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোংলা বন্দরের পশুর নদের (নৌ চ্যানেল) হাড়বাড়িয়া এলাকা থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত এলাকার নাম ‘ইনার বার’। ইনার বারের ২৩ দশমিক চার কিলোমিটার এলাকায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের উদ্ধোধন করা হয় ২০২১ সালের ১৩ মার্চ। ওই বছরের ১০ এপ্রিল খনন কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৭৯৩ কোটি টাকা। খনন করা বালু বা পলি মাটি ফেলার জন্য মোংলা উপজেলায় ৭০০ একর জমি ও খুলনার দাকোপ উপজেলায় বানিশান্তা এলাকায় ৩০০ একর জমি হুকুম দখল করা হয়। মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি এলাকার জমিতে বালু ফেলা হয়। কিন্তু পশুর নদের পাশে খুলনার বানিশান্তার তিন ফসলি জমিতে বালু ফেলা ঠেকাতে ২০২২ সালের প্রথম দিকে আন্দোলন করেন এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সংগঠন। তাদের আপত্তির মুখে সেখানে বালু ও মাটি ফেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই বছর ধরে খনন কাজ বন্ধ ছিল। তখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছিল ৩৪ শতাংশ। এ অবস্থায় নতুন করে মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের শানবান্ধা মৌজায় ২৬২ একর জমিতে বালু ফেলানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হলে সেখান থেকে ভূমি মন্ত্রাণালয়ে পাঠানো হয় এরই মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় ২০২২ সালের জুন মাসে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে ৯৯২ কোটি টাকায়, যা গত বছরের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল ও হাইড্রোলিক্স) শেখ শওকত আলী বলেন, ইনার বারের গভীরতা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় মিটার। খনন করে সাড়ে আট মিটার করার কথা। ড্রেজিং করা স্থানগুলো থেকে যে পরিমাণ পলি অপসারণ করা হয়েছিল, গত প্রায় দুই বছরে তার ৭০ ভাগ পলি আবার জমা হয়েছে। এ অবস্থায় খনন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ড্রেজারের তেলসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে। বালু ফেলা জায়গা সংকটের বিয়য়ে তিনি বলেন, নতুন করে কোন জায়গা না মেলায় পুরোনো জায়গা জয়মনি এলাকায় আপাতত বালু ফেলা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে সেকশন-৪ এর আওতায় বাল্কহেড ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে অন্য একটি বাল্কহেডে তোলা হচ্ছে। পরে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরপর রবিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে কাটার সাকশন ড্রেজার দিয়ে পুরোদমে খনন করা হবে। খননকৃত সেই পলি মাটি রাখা হবে তাদের অধিগ্রহণ করা জয়মনি এলাকায়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার রাসেল আহম্মেদ খাঁন বলেন, খননের মাধ্যমে পলি মাটি রাখার জায়গার অভাব দেখা দিলে ইনার বারে খনন বন্ধ থাকলেও নৌ চ্যানেল স্বাভাবিক ছিল। জাহাজ চলাচলে সমস্যা হয়নি। তবে নিয়মিত খনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা না গেলে ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হবে। এজন্য পুরোনো জায়গা জয়মনিতে মাটি ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুক্রবার থেকে খননকাজ শুরু করা হয়। এর আগে এই খননকাজ শুরুর আগে সার্ভে করে দেখা হয়েছে যে কতটুকু পলি জমেছে। সে অনুযায়ী এই খননকাজ শুরু করা হয়।
সদ্য যোগদান করা মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে নিয়মিত ‘নৌ চ্যানেল’ খননের বিকল্প নাই। ম্াঝখানে ডাম্পিং জটিলতায় বেশ কিছুদিন খননকাজ বন্ধ ছিলো। তবে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইনার বারের খননকাজ এরপর থেকে নিয়মিতভাবে চলমান থাকবে।