খুলনায় গ্যাস কিনতে হোঁচট খাচ্ছেন ক্রেতারা!

গ্যাসের দাম ফের বৃদ্ধির কারণে চরম বিপাকে ব্যবহারকারীরা
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ খুলনায় লিকুইফাইড বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গ্যাস কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রায় সর্ব আয়ের মানুষ। চোখ রাঙানো ধোয়ার রান্নার ঘর ছেড়ে এখন গ্যাস ব্যবহার যেন সাধারন মধ্যবিত্ত মানুষের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার কারণে শতকরা প্রায় ৯৫% গ্যাস ব্যবহারকারী চরম বিপাকে পড়ছে গ্যাস কিনতে। অনেকটাই বলতে গেলে রাতারাতি বেড়ে গেল গ্যাসের দাম। পেট্রোলিয়াম গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নতুন বছররে গ্যাস বৃদ্ধির এমন ধাক্কায় দূর্ভোগে পড়েছে প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তজার্তিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেশি, ডলার সংকট ও চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কমের কারণে ওই সকল গ্যাসের দাম বেড়েছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বাজারে ১২ কেজির এলপি সিলিন্ডার গ্যাস হিসাবে দেখা মেলছে বসুন্ধরা, ওমেরা, টোটাল, বিএম, লাফস্, বেক্সিমকো, সেনা কল্যাণ, ওরিয়ণ, ডেল্টা, বিবিসি, ফ্রেশসহ অন্যান্য। একই সাথে বাজারে ৩০কেজির এলপি সিলিন্ডার হিসাবে দেখা মিলছেও বসুন্ধরা গ্যাসের। পাইকারী গ্যাস ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে জানা গেছে, বাজারে ওমেরা, টোটাল, বিএম, লাফস্, বেক্সিমকো, সেনা কল্যাণের ১২ কেজির এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ হতে ১৫০০ টাকায় এবং ৩০ কেজির গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ টাকায়। যা পূর্বে ১২ কেজির গ্যাস বিক্রি হয়েছে ১৪৪০ টাকায় এবং ৩০ কেজির গ্যাস বিক্রি হয়েছে ৩৩০০ টাকায়। বর্তমানে ওই পাইকারী বিক্রেতা বা পরিবেশকদের নিকট হতে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল ও মফস্বলের এলাকার খুচরা বিক্রেতারা ১৫’শ টাকার গ্যাস কিনে নিয়ে বর্তমানে বিক্রি করছে ১৫৮০ হতে ১৬০০ টাকায়, যা পূর্বে বিক্রি করেছে ১২ কেজির সিলিন্ডার ১৫০০টাকায় এবং ৩০ কেজির সিলিন্ডার ৩৩০০ টাকায়। সেই অনুসারে বর্তমানে প্রতি ১২ কেজির গ্যাসের সিলিন্ডারে বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ টাকা এবং ৩০ কেজির গ্যাসের প্রতি সিলিন্ডারে বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০ টাকা। হঠাৎ করে বোতলজাত গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গ্যাস কিনতে হোঁচট খাচ্ছেন নির্ধারিত আয়ের মধ্যবিত্ত পরিবার, সাধারন আয়ের মানুষসহ ব্যবসায়ীরাও।
চা বিক্রেতা লিটন জানান, চা বিক্রির আগ্রহ হারিয়ে গেছে। চিনি ও গ্যাস দু’টোরই দাম বেশি। গত মাসে যে গ্যাস ১৫০০টাকায় কিনেছি, তা এখন প্রায় ১৬০০টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমানে ইলেকট্রিক হিটারে পানি গরম করে চা বিক্রি করছি। হোটেল মালিক মিঠু জানান, হোটেল ব্যবসা এখন অনেকটাই দায়বদ্ধতায় পড়ে করছি। কারণ প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। এক সময়ের ৯৫ টাকার ভোজ্যতেল এখন ১৬৮টাকা, ময়দা ৬৭টাকা, চিনি ১৪৫ টাকা, বাকী ছিল গ্যাসও তাও এখন আকাশ ছোঁয়া। ১২ কেজির গ্যাসের সিলিন্ডার বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকায়, যা সপ্তাহ খানেক আগে কিনেছিলাম ১৫০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ১০০ টাকা। তানিয়া নামের এক গৃহিনী জানান, গেল কয়েক দিনের ব্যবধানে ১২ কেজির এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। কয়েকদিন আগে যে গ্যাস কিনেছি ১৫০০ টাকায়, বর্তমানে তা কেনা লাগছে ১৬০০ টাকা দরে। এলপিজি গ্যাসের দাম যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। গ্যাসেরও দাম এমন বেড়েছে যে, এখন চাইলেই যে আলু সিদ্ধ করে খাবো, তারও উপায় নেই। খুচরা বিক্রেতা বাচ্চু জানান, পাইকারী দোকান হতে হাতে গোনা কয়েকটি গ্যাস কিনে নিয়ে আসি। তা আবার বাড়ীতে বাড়ীতে সাইকেলে করে পৌঁছে দিতে হয়। সারাদিন ২/৩টা গ্যাস সর্ব্বোচ বিক্রি করি। একটা গ্যাসে ৫০টাকা লাভ না করলে চলবো কি করে। মাদ্রাসা শিক্ষক জিয়া চৌধুরী জানান, একইতো বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া। তারপর আবার গ্যাসের দাম মাস যেতে না যেতে বাড়ে। আমার পরিবার গ্যাসের রান্নার উপর নির্ভরশীল। মাসে আমার দুটি গ্যাস লাগে। গত মাসে যে গ্যাস কেনেছি ১৫০০ টাকায়, তা বর্তমানে ১৬০০ টাকা। ব্যয় বাড়ছে কিন্তু আয় বাড়ছে। এভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে সাধারন মানুষ যাবে কোথায়?
খুলনা এলপি গ্যাস ডিলার এসোসিয়েশনের যুগ্ম-সম্পাদক ও তালকুদার ট্রেডার্সের সত্ত্বাধীকারী ওয়াসিম জানান, আন্তজার্তিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেশি, ডলার সংকট ও চাহিদর তুলনায় উৎপাদন কম যার কারণে ওই সকল গ্যাসের দাম বাড়তি। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেকই আমরা গ্যাস সরবরাহ ও বেচাবিক্রি করি। যখন যে দাম নির্ধারন করা হয়, সেই দামেই সামান্য লাভে কেনাবেচা চলে।