স্থানীয় সংবাদ

খুলনার বই মেলায় দৃষ্টিনন্দন স্থায়ী ‘লেখক কুঞ্জ’ বাড়িয়েছে মাঠের সৌন্দর্য

কবি সাহিত্যিক পাঠকদের যেন মিলন মেলা

খলিলুর রহমান সুমন ঃ খুলনা নগরীর বয়রা সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষানুরাগী মরহুম হারুন অর রশিদ বাচ্চু খুলনার একুশে বই মেলার স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি ২০০৩ সালে বয়রা সাহিত্য সংসদ চত্বরে শুরু হয় তিন দিন ব্যাপী বারোয়ারি মেলা। ২০০৪ সালেও তিন দিন ব্যাপী একই মেলার আয়োজন করা হয়। তবে ওই মেলায় কবি হুসাইন বিল্লাহের কাব্যগ্রন্থ ‘পরিবর্তন চাই’ এর মোড়ক উন্মোচন হয়। এখানে একটি বইয়ের স্টলও দেয়া হয়। এই মেলার মূল্যায়ন সভায় বারোয়ারি মেলাকে বই মেলা নামকরনের প্রস্তাব করা হয়। অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদিরসহ অনেকের সভা-পরামর্শ শেষে বয়রা বিভাগীয় গণগ্রন্থগার প্রাঙ্গণে বড় পরিসরে বই মেলা করার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৫ সালে বিভাগীয় গণগ্রন্থগারে পাঁচ দিন ব্যাপী বই মেলা নামে মেলা শুরু হয়। ২০০৬ সালে ওই মেলার নাম দেয়া হয় একুশে বই মেলা। চলে সাত দিন ব্যাপী। তখন থেকেই শুরু হয় একুশে বই মেলা। ২০০৮ সালে মেলা চলে ১৪ দিন। ২০০৯ সাল থেকে ২৯ দিন ব্যাপী প্রাণের বই মেলা চলে আসছে। ২০১০ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাস ব্যাপী বড় পরিসরে শুরু হয় একুশে বই মেলা। তখন থেকেই মেলা মাঠে স্থায়ীভাবে লেখক কুঞ্জ করার দাবি করা হচ্ছে। যা দীর্ঘ বছর পর বাস্তবে রূপ দিয়েছে। এ জন্য মেলা প্রতিষ্ঠাতারা সকলে বেজায় খুশি। কবি ও সাহিত্যিক সংগঠক হুসাইন বিল্লাহ বলেন, ২০১০ সাল থেকে মেলা মাঠে একটি ছোট গোলপাতার ঘরে ‘লেখক কুঞ্জ’ কবি লেখক সাহিত্যিকদের সেতু বন্ধন ধরে রেখেছে। এটি স্থায়ী করার দাবি ছিল অনেক পুরানো। সম্প্রতি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় লেখক কুঞ্জটি ভেঙ্গে যায়। আর মেরামত করা হয়নি। পরে মেলার কুড়ি বছর পূর্তি উপলক্ষে লেখক কুঞ্জ স্থায়ী উপহার পেল কবি সাহিত্যিকরা। এ কুঞ্জে লেখক-সাহিত্যিক আর কবিদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। মেলা ছাড়াও সামাজিক সংগঠন ও সাহিত্যিক সংগঠন চাইলে কর্তৃপক্ষে অনুমতি সাপেক্ষে এই লেখক কুঞ্জে ছোট পরিসরে সভা বা কবিতার আসর করতে পারবে বলে জানান বই মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা বহু প্রতিভার অধিকার হুসাইন বিল্লাহ। মেসার্স বুক পয়েন্ট স্টলের প্রতিনিধি আল আমিন বলেন, লেখক কুঞ্জ স্থায়ীভাবে করার কারণে মেলায় সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়েছে। কবি সাহিত্যিক, দর্শক, পাঠক আর স্টল মালিকরা অবসর সময় এই কুঞ্জে বসে সময় কাটাতে পারছেন। যা বিগত দিনে ছিল না। দৃষ্টিনন্দন এই লেখক কুঞ্জ মেলা মাঠের আকর্ষণ বাড়িয়েছে। এতে করে মেলায় আগতরা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে বলে তিনি জানান। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একুশের আলো খুলনার প্রধান নির্বাহী মাহাবুবুল হক বলেন, তার স্টলে নাম মাত্র মূল্যে রক্তের শ্রেণী নির্ণয় করা হচ্ছে। এ জন্য রাখা হচ্ছে ১৫ টাকা। তিনি বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তিনি নিয়মিত মেলায় স্টল দিয়ে আসছেন। তখন থেকেই লেখক কুঞ্জ স্থায়ী করার দাবির কথা শুনে আসছেন। অবশেষে সেই দাবি আলোর মুখ দেখলো। এতে করে মেলায় মার্যাদা অনেক বেড়েছে। বিভিন্ন সাহিত্যিক ও সামাজিক সংগঠন মেলায় এসে ওই লেখক কুঞ্জে বসে সময় ব্যয় করতে পারছেন। এতে করে সবাই খুশি বলে তিনি জানান। আসফিয়া বুক ডিপো স্টলের প্রতিনিধি কেএম তুহিন বাবু বলেন, স্থায়ী লেখক কুঞ্জ মেলা মাঠকে করেছে সমৃদ্ধ। এতে করে মেলায় কবি সাহিত্যিক আর লেখকরা আসতে উৎসাহিত হচ্ছে। তারা স্বচ্ছন্দে মেলায় এসে ঘুরে ফিরে লেখক কুঞ্জে বসে নিজের কথা পরামর্শ ভাগাভাগি করে নিতে পারছে। এ যেন কবি সাহিত্যিক আর লেখকদের মিলন মেলা। এ জন্য মেলায় আগতরা সবাই খুশি বলে তিনি জানান। বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার খুলনা উপ-পরিচালক ও একুশে বই মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ হামিদুর রহমান বলেন, বই মেলা মাঠে স্থায়ীভাবে লেখক কুঞ্জ করতে হবে-এ দাবি দীর্ঘ দিনের। লেখক-কবি সাহিত্যিকদের দাবির মুখে লাইব্রেরীর ফান্ড থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মেলা মাঠে লেখক কুঞ্জ। ডিসেম্বর মাসে’২৩ এ লেখক কুঞ্জের কাজ শুরু হয় এখনও চলছে। কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। লেখক কুঞ্জের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকী আছে লেখক কুঞ্জের চারপাশে এসএস পাইপ দিয়ে ঘিরে দেয়া। দু’টি সাইনবোর্ড স্থাপন আর একটু ঘষা মাজা আর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। এ কাজটুকু এখনই শেষ করা যায়। যেহেতু মেলা চলছে তাই বাকী কাজ টুকু মেলা শেষে করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, আগে মেলা মাঠে গোলপাতার ছাউনি আর বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে তৈরী করা হতো লেখক কুঞ্জ। কিন্তু সেটা গত কয়েক মাস আগে দুর্যোগে ভেঙ্গে যায়। তারপর থেকে লেখক কুঞ্জ করার ব্যাপারে চাপ দিতে থাকে কবি সাহিত্যিকরা। তাদের দাবির মুখে তিনি এই স্থায়ী লেখক কুঞ্জ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এখানে লেখক কুঞ্জ হওয়ার কারণে মেলার সৌন্দর্য অনেক গুনে বেড়েছে। লেখক-কবি আর সাহিত্যিকদের মেলায় এসে বসার একটি চমৎকার জায়গা হয়েছে। তারা ওই কুঞ্জে মিলন মেলায় পরিণত করছেন। এতে করে মেলায় আগত লেখক-কবি সাহিত্যিকরা স্থায়ী লেখক কুঞ্জ পেয়ে বেজায় খুশি বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button