পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে তবুও উত্তপ্ত ফুলের বাজার!
বসন্তবরণ ও ভ্যালেন্টাইন ডে ঘিরে বাড়তি চাহিদায় দাম আকাশ ছোঁয়া
মোঃ আশিকুর রহমান ঃ ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ও ১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন ডে ঘিরে নগরীর ফুল বাজারে উৎসবের রঙ ধরেছে ব্যবসায়ীদের মনে। বসন্তবরণ আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের উৎসবে নগরীর ফুলের বাজার এখন চাঙ্গা। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহের পরও ফুল গায়ে যেন আগুন লেগেছে, দাম বাড়তির অভিযোগ করেছেন ফুল কিনতে আসা ক্রেতারা, বিপরীতে ফুল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরের বিশেষ দিনগুলোতে বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারী, স্বাধীনতা দিবস, মহান বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি ও নানা দিবস পালনে ফুলের চাহিদা বেশি থাকার কারণে নৈমিত্তিক সময়ের চেয়ে ফুল কিনতে বাড়তি দাম গুনতে হয়। তবে পহেলা বসন্ত ও ভালবাসা দিবসকে ঘিরে সারা দেশ ব্যাপী ফুলের ব্যাপক চাহিদার থাকার কারণে যশোরের গদখালী পাইকারী ফুলের বাজারেই বর্তমানে স্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে ফুলের। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন গদখালীতে গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়াস, জারব্রেরাসহ প্রতিটি ফুলের দাম প্রায় দ্বিগুণ।
১১ ফেব্রুয়ারী (রবিবার) নগরীর বেনিবাবু রোডের ফুলের বিপনী বিতান সমূহ, বয়রা মোড়ের মাধবী পুষ্প কুঞ্জ, দৌলতপুরের মীম গার্ডেন, পলক পুষ্পমালয়, মাধুরী পুষ্প, জুঁই গার্ডেনসহ স্থানীয় এলাকার ফুলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পহেলা বসন্ত ও ভ্যালেন্টাইন দিবস উপলক্ষে সাজ-সজ্জা ও ফুল কেনাবেচা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা, দোকানগুলো সেজেছে বর্নীল সাজে। প্রতিটি ফুল দোকানের সামনেই আনাগোনা বেশি স‹ুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। বাসন্তী উৎসব আর ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দোকানে ফুলের শোভায় মুখরিত। এর মধ্যে লাল গোলাপ, চায়না গোলাপ, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাøাডিয়াস, রজনীগন্ধা, গাঁদাসহ নানা রঙ ও বর্ণের ফুল রয়েছে। বেশির ভাগ ফুলই আমদানি করা হয়েছে যশোরের ঝিকরগাছা গদখালী হতে। থরে বিথরে সাজানো রজনীগন্ধা, গোলাপ, গ্লাডিয়াস, রজনীগন্ধা, চন্দ্র মল্লিকা, জারবেরা, গাঁদাসহ নানা রঙ ও বর্ণের ফুল ও নানা কাজ নিয়ে চরম ব্যস্ত এখন ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমানে বেচাকেনা চাপ কিছুটা কম থাকলেও ২দিন পর চাপ বাড়বে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) গোলাপ ১০০পিস ২৫০০টাকায়, রজনীগন্ধা ১০০পিস ১৫০০টাকায়, জারব্রেরা প্রতি পিস ২০টাকা, মল্লিকা প্রতি পিস ৫টাকা, গ্লাডিয়াস প্রতি পিস ২০ টাকা, চায়না গোলাপ প্রতি পিস ৭০ টাকা, গাধা ফুল হাজার ১০০০ টাকা দরে ক্রয় করছে। যা দুই সপ্তাহ আগে গোলাপ ১০০ পিস ১০০০ হতে ১২০০ টাকা, রজনীগন্ধা ১০০ পিস ১০০টাকা, জারব্রেরা প্রতি পিস ১২ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ২ টাকা, গাদা হাজার ৩০০ টাকা, গ্লাডিয়াস ১০০ পিস ৭০০-৮০০টাকা দরে ক্রয় করে ছিলেন। বর্তমানে গোলাপ প্রতি পিস ৪০/৫০ টাকা, চায়না গোলাপ ১০০/১২০ টাকা, রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ২০/২৫ টাকা, গ্লাডিয়াস প্রতিপিস ৩০/৩৫ টাকা, জারব্রেরা ৪০টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতি পিস ১০ টাকা, গাদা হাজার ১৫০০টাকা দরে বিক্রয় করছেন। বাড়তি দামে কেনাবেচায় ব্যবসায়ীদের মুখে হাঁসি ফুটলেও নারাজ হচ্ছেন ক্রেতারা।
মীম গার্ডেনের ফুল ব্যবসায়ী খোকন জানান, গদখালিতে ফুলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও চাহিদা কারণে প্রতিটি ফুলের দাম বহুগুণে বেড়েছে। তাছাড়া ১০০ পিসের আটি বলে পাঠিয়ে দিলে, আটিতে ফুল কম পাওয়া দূর থেকে অনেক লাভ মনে হয়, আসলে পুঁজি খাটিয়ে আহামরি লাভ পাওয়া যায় না। পলক পুষ্পালয়ের ফুল বিক্রেতা সুমন ও সজল জানান, প্রতি বছরেই বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের দাম অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাড়তি দামে ফুল কিনে আনতে হয় গদখালী হতে, এবার টাকা দিয়েও ফুল পাওয়া যাচ্ছে না, এতো চাহিদা ফুলের। তাই ক্রেতা সামলাতে বাড়তি দামেই পাইকারী বাজার হতে ফুল কিনতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী জাফর জানান, পয়লা বসন্ত, ভালোবাসা দিবস, পয়লা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরে বেশ কেনাকাটার চাপ থাকে। তাছাড়া সারা বছরই চলে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে ব্যবসা। বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের দাম বেশ চড়াও হয় যায়। কয়েকদিন আগের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিয়াস, জারব্রেরা ফুলের দাম যা ছিল বর্তমানে তার ডবল। চাহিদা অনুসারে ফুলের সরবরাহ কম। তাছাড়া ফুল রাজধানী মুখি হওয়ার কারণে গদখালী বাজারে দাম বেশি। ফুল কিনতে ক্রেতা কলেজ ছাত্রী লামইয়া জানান, আমার বোনের বিবাহ বার্ষিকীর জন্য ফুল কিনতে এলাম, একি! ফুলের গায়ে যেন আগুন। দু’ সপ্তাহের বিক্রির ১৫টাকার গোলাপ এখন এক লাফে ৫০টাকা। জানিনা আরো কত বাড়বে? বসন্তবরণ ও বিশ^ ভালাবাসা দিবসকে ঘিরে নগরীর ফুলের বাজারে যেন আগুন লেগেছে এমনই মন্তব্য ফুল কিনতে আসা সাধারণ ক্রেতাদের।