স্থানীয় সংবাদ

নানান আনুষ্ঠানিকতায় খুলনায় সুন্দরবন দিবস পালিত

স্টাফ রিপোর্টার ঃ ১৪ ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস হিসেবে ঘোষণায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বানের মধ্য দিয়ে এবারের সুন্দরবন দিবস উদযাপিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খুলনায় আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবসে বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসটি পালন করা হয়েছে।
সুন্দরবন একাডেমীর উদ্যোগে এবং খুলনা প্রেস ক্লাব, ট্যুর অপারেটার্স এ্যাসোশিয়েশন অব সুন্দরবন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং খুলনা সাইক্লিং কমিউনিটির যৌথ আয়োজনে এবারে কেন্দ্রীয়ভাবে খুলনায় সুন্দরবন দিবস উদযাপন করা হয়। সুন্দরবন একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদিরের সভাপতিত্বে এবং তছলিম আহমেদ টংকারের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, খুলনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক পূর্বাঞ্চল সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সনি, সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খান মোতাহার হোসেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাসনাহেনা, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মোঃ নাজমুস সাদাত।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সুন্দরবন একাডেমীর পরিচালক ও খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সুন্দরবন একাডেমী’র উপদেষ্টা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তর-এর নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ। আয়োজকদের পক্ষে বক্তৃতা করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ নূর আলম শেখ এবং খুলনা সাইক্লিং কমিউনিটির মোস্তফা কামাল। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন মাসাস-এর নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শিলু, নাগরিক নেতা মোঃ সাবির খান, ইসরাত আরা হীরা, অরবিন্দ মৃধা, বাকি বিল্লাহ, সাংবাদিক গাজী মনিরুজ্জামান, ইয়াসির আরাফাত রুমী, পলাশ চন্দ্র ঢালী প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বলেন, সুন্দরবনের সুরক্ষায় সুন্দরবন দিবস পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের জন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রী, সচিব এবং বনবিভাগের সাথে অধিপরামর্শ করতে হবে। সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের এই দাবি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া গেলে সামনের বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালিত হবে। এ ক্ষেত্রে তিনি তার পক্ষে সম্ভব সব কিছুই করবেন। তিনি দিবসের প্রতিপাদ্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, প্লাস্টিক সুন্দরবনের জলজ সম্পদের বেশী ক্ষতি করছে। শশুক, ইরাবতি ডলফিন, সামূদ্রিক কচ্ছপ এবং হাঙ্গর পলিথিন খেয়ে ফেলছে। এতে পরিপাকতন্ত্রে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে এগুলো মারা যাচ্ছে। সিঙ্গেল ইউজড পলিথিন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকারক। বাংলাদেশ এবং ভারত মিলিয়ে বছরে চার মিলিয়ন টন প্লাস্টিক সুন্দরবন ইকো সিস্টেমে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে সুন্দরবনকে সুরক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বন বিভাগ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে ভূমিকা পালন করতে হবে।
সুন্দরবন দিবসে এবারে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়, “প্লাস্টিক ও পলিথিনমুক্ত সুন্দরবনের জনপদ”। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্লাস্টিক এবং পলিথিন কোন অবস্থাতেই নষ্ট হয় না। এটি ভেঙে গিয়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আকারে মাইক্রো প্লাস্টিক এবং ন্যানো প্লাস্টিক হিসেবে প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। সুন্দরবনাঞ্চলে এই পলিথিন এবং প্লাস্টিক সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের ঘনত্ব এবং উচ্চতার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জনগণকে সচেতন করা না গেলে শুধু আইন করে প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো যাবে না।
বক্তারা বলেন, সুন্দরবনের টিকে থাকার উপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি বহুলাংশে নির্ভরশীল এ বনকে ভালভাবে বাঁচিয়ে রাখতে সকলকে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বক্তারা সুন্দরবন রক্ষায় জনঅশংগ্রহণ আরো বাড়ানোর উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, শুধুমাত্র বন বিভাগের কিছু কর্মীদের দিয়ে সুন্দরবনকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকার মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলতে হবে যে সুন্দরবনের যে কোন ক্ষতি তাদেরও ভবিষ্যতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করবে। সুন্দরবনাঞ্চলের মানুষ আগামী বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালন করতে চান।
দিবসটি উপলক্ষে ট্যুর অপারেটর্স এ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন-টোয়াস গতকাল খুলনা মহানগরীর লায়ন্স স্কুল মিলনায়তনে সুন্দরবন বিষয়ক চিত্রাঙ্কন এবং রচনা প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণী এবং খুলনা সাইক্লিং কমিউনিটি এ উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য সাইকেল র‌্যালির আয়োজন করে।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে খুলনায় অনুষ্ঠিত হয় ১ম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন। নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে সাফল্য পাওয়া সে সম্মেলনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন সেই সময়ের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। ২০০১ সালের সেই সুন্দরবন সম্মেলনের পরের বছর থেকেই খুলনাসহ সুন্দরবন সন্নিহিত জেলাগুলোতে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই দিবস পালনের কর্মকা-ে সংযুক্ত থাকে সুন্দরবন একাডেমী, বন বিভাগ, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুন্দরবন সংলগ্ন সাংবাদিক সমাজ এবং প্রকৃতিপ্রেমী আপামর মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button