স্থানীয় সংবাদ

মেডিকেল ভর্তিযুদ্ধে জয়ী অপু ডাক্তারি পড়ার খরচ নিয়ে চিন্তিত!

মোঃ আব্বাস উদ্দীন, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি ঃ অপু দাসের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর অধ্যবসায়ের কাছে হার মেনেছে দ্বারিদ্রতা। শতবাঁধা বিপত্তিকে পেরিয়ে ছিনিয়ে এনেছেন সাফল্যের সোনার চাবি। অপু দাস যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা খানপুর গ্রামের ঋষি পল্লীর অসিত দাস ও সাধনা দাসের ছেলে। তিনি চলতি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষা-বর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। দ্ইু ভাইয়ের মধ্যে অপু ছোট। অপু দাস ছোট বেলা থেকেই খুবই মেধাবী। পড়া-লেখার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ তার। ছেলের আগ্রহ দেখে দরিদ্র পিতা-মাতা কষ্ট ক্লেশ করে দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখাচ্ছেন। অপুর পিতা অসিত দাস ছোট বেলা থেকেই জুতা সেলাই ও জুতা পালিশের কাজ করে থাকেন। তিনি বর্তমানে মণিরামপুর পৌর শহরের ফুটপথে চটের উপর বসে জুতা সেলাই ও জুতা পালিশের কাজ করছেন। জমি-জমা বলতে নিজের পৈতৃক ভিটেটুকুও নেই তাদের। সহায় সম্বলহীন অপুর পিতা অসিত দাস কাজের সন্ধ্যানে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রায় ৪০ বছর আগে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে মণিরামপুরে এসেছিলেন। কাজ করতে করতে মণিরামপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাধনা দাসকে বিয়ে করে এখানেই থেকে যান অসিত দাস। শ্বাশুড়ীর দেওয়া তিন শতক জমির উপর ঘর বেঁধে বসবাস করছেন অসিত দাস। অপুর বড় ভাই তিতাস দাসও খুব মেধাবী । তিনি মণিরামপুর বাজারের একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কর্মচারীর কাজ করেন এবং একই সাথে তিনি কেশবপুর সরকারী কলেজে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়া-লেখা করছেন। অপু দাস ছোট বেলা থেকেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। স্থানীয় খানপুর ঋষি পল্লীর ব্র্যাক সেন্টার থেকে ৫ম শ্রেনি পাশ করে মণিরামপুর সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০২০ সালে এসএসসি ও মণিরামপুর সরকারী কলেজ থেকে ২০২২ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ন হন। এরপর বিগত ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি সফল হতে পারেননি। তথাপিও হার না মানা অপু দাস হাল ছাড়েননি। চলতি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে কোন প্রকার কোচিং না করেই রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলশ্রুতিতে অপু দাস এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। অপু দাস বলেন,আমার জীবনের বড় আশা ছিল আমি একজন চিকিৎসক হবো । দুঃখী ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি চেষ্টা করে গেছি। হয়তো ভর্তির সুযোগ পেয়েছি কিন্তু সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। জানি না আমি কিভাবে মেডিকেলের খরচের মোকাবেলা করবো। আমার অসহায় পিতা-মাতা কিভাবে কি করবেন সেটি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। পিতা-মাতা ভাই শিক্ষক,বন্ধু-বান্ধবসহ সকলের কাছে ঋনী। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার পিতা-মাতা খুব কষ্ট করে থাকেন। আমি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। .মা সাধনা রানী বলেন,আমি অন্য দশ জনের মত আমার ছেলেকে ভালো কাপড় চোপড়,বই-খাতা কিনে দিতে পারিনি। আমাদের কোন জমি-জমা নেই। ওর বাবা রাস্তার ফুটপথে বসে জুতা সেলাই ও জুতা কালির কাজ করেন। আমার অপু আজ ডাক্তার হবে এই কথা শুনে ভালো লাগছে কিন্তু ওকে যে কিভাবে আমরা পড়াবো তাই নিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছি। অপুর পিতা অসিত দাস বলেন,আমি লেখা পড়া জানিনে,জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বড় হয়েছি। ক্ষেত খুলা নেই,জুতার কাজ করে সংসার চালাই। ওরা অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করছে । বাবা হয়ে বলতে লজ্জা পাচ্ছি। শুনিছি অপুর পড়াতি পারলি সরকারী হাসপাতালের অনেক বড় ডাক্তার হবে। কিন্তু অিিম কিভাবে পড়াবানে। প্রতিবেশি মিলন দাস বলেন,অপু পড়ালেখায় খুব ভালো। পড়া লেখা ছাড়া অন্য কিছু বোঝে না সে। অপু ডাক্তারি চান্স পেয়েছে জেনে আমরা এলাকা বাসী খুব খুশী । আমদের পাড়ায় একজন বড় ডাক্তার হবে। প্রতিবেশী গঙ্গা রাণী দাস বলেন,অপু খুব শান্ত স্বভাবের। ওদের পড়া লেখার জন্যিই ওর মা-বাবা খুব কষ্ট করে । ওর মা টায়ার টিউব-কাটার কাজ করে। ওর বাবা বাজারে জুতা সেলাই-কালির কাজ করে । ওরা খুব অভাবী। অপুর শিক্ষক অধ্যাপক বাবুল আকতার বলেন,কঠোর অধ্যবসায় ও ইচ্ছা শক্তি দিয়ে যে সব কিছু অর্জন করা যায় তার উজ্বজল দৃষ্টান্ত হলো অপু দাস। দ্বারিদ্রতা হার মেনেছে তার ইচ্ছা শক্তির কাছে। আমি তার সর্বাঙ্গীন সাফল্য ও মঙ্গল কামনা করি। তার সামনে খরচের অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিত্তবানদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button